কলকাতা: রাজ্যের বিসর্জন-নির্দেশিকা খারিজ কলকাতা হাইকোর্টের। দশমী থেকে রোজ রাত বারোটা পর্যন্ত বিসর্জন। মহরমের দিনও চলবে বিসর্জন। অন্তর্বর্তী নির্দেশ আদালতের। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে, কোনও চিন্তা নেই। প্রতিক্রিয়া মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্য সরকার বলেছিল, ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ দশমীর দিন বিসর্জন হবে রাত দশটা পর্যন্ত। কলকাতা হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে, বিসর্জন হবে রাত বারোটা পর্যন্ত। এবার একাদশীর দিন অর্থাৎ পয়লা অক্টোবর মহরম। রাজ্য সরকার বলেছিল, এই দিনে বিসর্জন দেওয়া যাবে না। কলকাতা হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলেছে, দশমী থেকে রোজই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যাবে। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি এবং বিচারপতি হরিশ টন্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানিয়েছে, দুই সম্প্রদায় একসঙ্গে উৎসব পালন করবে। দুই ধর্মের শোভাযাত্রার জন্য আলাদা আলাদা রুট নির্দিষ্ট করবে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপাররা বাহিনী মোতায়েন করবেন। কোনও কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তাঁরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। হাইকোর্ট যে রাজ্যের নির্দেশিকা খারিজ করতে পারে, সেই ইঙ্গিত মিলেছিল বুধবারই। যখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তর কাছে জানতে চান, কোন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আপনারা এই নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা জারি করলেন? কীসের ভিত্তিতে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা করছেন? কোনও কিছু ঘটতে পারে এই আশঙ্কা আপনারা করতেই পারেন কিন্তু, সেই আশঙ্কার উপর ভিত্তি করে কোনও নিষেধাজ্ঞা কারও উপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। বৃহস্পতিবারও শুনানির শুরুতে বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, রাজ্য তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু, আমরা ক্ষমতার যথেচ্ছ প্রয়োগের অনুমতি দিতে পারি না। সরকারকে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। কোনও জমায়েত থেকে হিংসা ছড়ালে প্রথমে জলকামান ব্যবহার করতে হবে। তারপর প্রয়োজন হলে মৃদু লাঠিচার্জ। প্রথমেই গুলি চালাতে পারে না সরকার। এক্ষেত্রে শেষ পদক্ষেপই প্রথমে নেওয়া হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার মানে সেটাই। আপনারা খুবই ক্ষমতাবান। কিন্তু, আপনারা কি ক্যালেন্ডারকে থামাতে পারেন? চাঁদের গতি কি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন? এরপরই সরকারের বিসর্জন-নির্দেশিকা খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। অ্যাডভোকেট জেনারেল আর্জি জানান, এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ যাতে এখনই কার্যকর না হয়, সেজন্য এর ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। বিচারপতিরা সেই আর্জিও খারিজ করে দেন। তাঁরা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের কিছু বলার থাকলে তারা তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশের কথা শুনে জানিয়েছেন, কোনও চিন্তা নেই। সমস্ত ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আদালত এদিন মামলার নিষ্পত্তি করেনি। পাঁচ সপ্তাহ পর ফের শুনানি হবে।