কলকাতা: লকডাউনে সন্তানের জন্য দুধ কিনতে বেরিয়ে পুলিশের মারে মৃত্যুর অভিযোগ! বুধবার হাওড়ার সাঁকরাইলের এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই তৎপর প্রশাসন। আজ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, “পুলিশকে মানবিক হতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার করা চলবে না।”


দেখুন: বাবা, মিস করছি না তোমাকে, প্রধানমন্ত্রী শেয়ার করলেন ছোট্ট করোনা-যোদ্ধার ভিডিও


প্রসঙ্গত, হাওড়ায় ৩২ বছরের যুবকের মৃত্যু নিয়ে প্রশাসনের তরফে পুলিশের মারের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। উল্টে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি সাউথ রাজ মুখোপাধ্যায় জানান, হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে লাল স্বামী নামের ওই যুবকের। শুক্রবার ওই ঘটনার উল্লেখ না করলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে ১০-১২টি অভিযোগ এসেছে, এদের মধ্যে ৭-৮ জনকে ‘ক্লোজড ডাউন’ করা হয়েছে। এরপরই পুলিশের উদ্দেশ কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশকে একদিকে যেমন দায়িত্বে অবিচল থাকতে হবে। একই সঙ্গে মানবিকও হতে হবে। বাজারে যাচ্ছে, রেশন তুলতে যাচ্ছে, ওষুধ কিনতে যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় কাজে নিযুক্ত এমন মানুষকে ছেড়ে দিতে হবে। পুলিশ যেন ক্ষমতার অপব্যবহার না করে।”


পড়ুন: বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে কোয়ারান্টিন থেকে পালাল দুবাই-ফেরত যুবক, পরে আটক


একই সঙ্গে এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো নিয়েও কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। ফেসবুকে যারা করোনা নিয়ে হাসি, ঠাট্টা, তামাশা করছেন, তাদের সাবধান করে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যারা এখন ঠাট্টা, তামাশা, মশকরা করছেন, তাদের কাছে অনুরোধ এমনটা করবেন না। আমরা যারা কাজ করছি, জানি না আগামী দিনে আক্রান্ত হব কিনা। গুজব ছড়াবেন না। হাসি, ঠাট্টা, মশকরা করবেন না। প্রশাসন গোটা বিষয়ে নজরদারি করছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


পড়ুন: ৩ মাস ইএমআই স্থগিত করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক


মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “হু এবং আইসিএমআর-এর নির্দেশ অনুযায়ীই রাজ্যে করোনার চিকিৎসার সমস্ত বন্দোবস্ত করা হয়েছে।” গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে তাঁর অনুরোধ, “একজনের সংস্পর্শে এসে অন্যজনের শরীর যেন ভাইরাস না ছড়ায়, তা খেয়াল রাখুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সঙ্গে মানবিকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ান।” লকডাউন পরিস্থিতিতে মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, গির্জা যেভাবে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে, তার জন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর উদ্দেশেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন তিনি।



প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯-এর প্রকোপে মৃত্যু মিছিল আরও বাড়ছে। করোনা ভাইরাসের মারণ থাবায় গোটা বিশ্বে এখনও পর্যন্ত ২৩ হাজার ৭৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ৫ লাখ ২৮ হাজার ২২৪ জন। ১ লক্ষ মানুষের করোনামুক্তি হলেও এই ভাইরাসের কোনও প্রতিকার এখনও আবিষ্কার হয়নি। সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা নিয়ে বহু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, করোনা পরীক্ষার পর জানা যাচ্ছে তাঁদের অনেকেই পজিটিভ। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬১। মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এই পরিস্থিতিতে সর্বত্রই একই বার্তা দেওয়া হচ্ছে, ‘বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন।’ সর্দি, কাশি, হলেই দৌঁড়ে হাসপাতালে চলে আসবেন না, বরং বাড়িতে থেকেই চিকিৎসককে উপসর্গগুলো জানিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।