কলকাতা: এসপি-পদে সরানোর পরেই হঠাৎ পদত্যাগ ভারতী ঘোষের। রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের কম্যান্ডান্ট পদে ইস্তফা।
দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার এবং ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার দায়িত্ব সামলেছেন ভারতী ঘোষ। ২৫ ডিসেম্বর এই আইপিএস অফিসারকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি থেকে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের কমান্ডান্ট পদে বদলি করা হয়। কিন্তু নতুন দায়িত্ব গ্রহণের আগেই সেই পদ থেকে ইস্তফা দিলেন ভারতী ঘোষ!
সূত্রের খবর, স্বেচ্ছাবসরের ইচ্ছেপ্রকাশ করে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিত কর পুরকায়স্থর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। নবান্ন সূত্রে দাবি, প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠালে গ্রহণ করা হবে। যদিও অনেকেরই প্রশ্ন, আচমকা কেন ইস্তফা দিলেন ভারতী ঘোষ?
এপ্রসঙ্গে ক্রেতাসুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডের কটাক্ষ, আমি বলব এমন উচ্চতায় উঠো না, কারণ উচ্চতার সীমাবদ্ধতা আছে। ওপরে আকাশ, নিচে নামতে হবে। পৃথিবীর ইতিহাস তাই বলে। তাই পা মাটিতে রাখা উচিত।
বিজেপি অবশ্য ভারতী ঘোষের বদলির নেপথ্যে অন্য গন্ধ পাচ্ছে। দলীয় নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, তৃণমূলের নেতারাই বলছে, বিজেপিকে ১০ হাজারে বেঁধে রাখতে বলা হয়েছিল ভারতীকে, কিন্তু বিজেপি ৪০ হাজারের বেশি পেয়ে গিয়েছে। ভারতী ঘোষকে ব্যবহার করেছে।
আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষের বদলি নিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ খুলেছেন মুকুল রায়ও। বলেছেন, নীরজ কুমার সিংহকে আমি ভাল বললে ওকেও হয়তো বদলি করে দেবে।
রাজ্যের শাসক দল অবশ্য দাবি করছে, এটা রুটিন বদলি। সাধন পাণ্ডে বলেন, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রান্সফার। বেশিদিন এক পদে থাকলে হয়। পলিটিক্যাল ব্যাপার নেই। বিরোধীদের তো খুশি হওয়ার কথা। মানুষের ভোট কি পুলিশ কন্ট্রোল করতে পারে? কে কি জানি না, আমরা ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছি, এটাই পজিটিভ।
বিজেপির অবশ্য এখনও পুলিশ সুপার পদে থাকাকালীন ভারতী ঘোষের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তারা হাতিয়ার করছে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর, সরকারি অনুষ্ঠানমঞ্চে ভারতী ঘোষের একটি মন্তব্যকে। মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সেদিন তিনি বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের মা। মমতাময়ী মায়ের মতো জঙ্গলমহল আগলে রেখেছেন। উনি জঙ্গলমহলের হৃদয়।
সায়ন্তন বসু এবিষয়টিকে হাতিয়ার করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে তো মা-দিদি বলেছেন। বিরোধীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর সবচেয়ে বেশি রেকর্ড ভারতী ঘোষের। দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে খড়গপুরে মাফিয়া খুনে মামলা করেছিল। ভারতী ঘোষকে ব্যবহার করেছে তৃণমূল। সেগুলো যাতে সামনে না আসে সেজন্য বদলি। আমরা এবার সেই সব তথ্য সামনে আনব।
পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠায়, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের সময় তাঁকে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ভোট মিটতেই ফের তাঁকে নিজের পদে বহাল করে রাজ্য সরকার। এহেন ভারতী ঘোষের বদলি এবং তারপরই তাঁর পুলিশের চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।