কলকাতা: পাল্টা পথে নেমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পা কাটার হুঁশিয়ারি দিলেন আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদার! বললেন, কমরেড শুনে রাখুন, যাদবপুরের বাইরে বেরোলে পা কেটে রেখে দেব!



যাদবপুরে সিনেমা প্রদর্শনী বিতর্কের পর পাল্টা সোমবার পথে নামে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। এদিন গোলপার্ক থেকে যাদবপুর পর্যন্ত মিছিল হয়। যোগ দেন বিজেপির নেতা কর্মীরাও। গলায় চড়া সুর। আর সেই মিছিলে স্লোগান উঠল 'মদ,গাঁজা চুর চুর, দেখিয়ে দিল যাদবপুর'। অনেকেই কটাক্ষের সুরে বলছেন, আরএসএসের ছাত্র সংগঠনের মিছিলে আজ যে স্লোগান শোনা গেল, ২০১৪ সালে তো এর আমদানি হয়েছিল তৃণমূলের হাত ধরে!



সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সেদিন যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলনকে নেশাখোরদের আন্দোলন বলে চিহ্নিত করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুকে তৃণমূলনেত্রীর ভাইপো লিখেছিলেন ‘মদ, গাঁজা, চরস বন্ধ, তাই কি প্রতিবাদের গন্ধ?’

অভিষেকের পথে হেঁটেই হোক ‘কলরব’কে আক্রমণ করেছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তদানীন্তন রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। অভিষেক-শঙ্কুরা সে দিন যা বলেছিলেন, তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন সেটাই শোনা গেল আরএসএসের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের মুখে।

শুধু স্লোগানই নয়, এবিভিপির পোস্টার, ব্যানারেও ছিল আক্রমণের একই কৌশল। সেখানে জায়গা পেয়েছিল, 'মাওবাদ', 'চুমুবাদ' জাতীয় লেখা। মুখেও ছিল অশালীন আক্রমণ। বিজেপি নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী হুমকির সুরে বলেন, দেখি ওরা কত দূর এগোতে পারে।



মিছিল-কর্মসূচির আঁচ যাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে না পড়ে সে জন্য তৎপর ছিল পুলিশও। ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে ছিল একাধিক ব্যারিকেড। যাদবপুর যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়ে ওঠে! প্রস্তুতি ছিল পড়ুয়াদের প্রতিরোধেরও। এবিভিপির মিছিল যখন যাদবপুর থানার দিকে এগিয়ে আসছিল, তখন প্ল্যাকার্ড হাতে ক্যাম্পাসের চার নম্বর গেটে জমায়েত করেন যাদবপুরের পড়ুয়ারা। তাতে সামিল হন অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মীরাও।

ছাত্রছাত্রীদের আশঙ্কাই কিছুক্ষণের মধ্যেই সত্যি হয়। আচমকা যাদবপুর থানার পর যে ব্যারিকেড ছিল, সেটি ভাঙার চেষ্টা করে এবিভিপি। হাতে জাতীয় পতাকা! কিন্তু, এবিভিপির আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় পতাকার সম্পর্ক কী? তাহলে কি জাতীয়তাবাদী আবেগকে নিজেদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন? প্রশ্ন তোলেন যাদবপুরের পড়ুয়ারা।



এরমধ্যেই মিছিলকে সতর্ক করে পুলিশ। মিছিলকারীদের উদ্দেশ্যে মাইক হাতে পুলিশকে বলতে শোনা যায়, এটা বেআইনি জমায়েত। আপনারা ব্যারিকেড ভাঙবেন না। কিন্তু তারপরও ক্যাম্পাসের দিকে এগোনোর চেষ্টা থামায়নি এবিভিপি। পুলিশের সঙ্গে তাদের তুমুল ধস্তাধস্তি হয়।

 

আরও পড়ুন:

যাদবপুর কাণ্ডে প্রশ্নের মুখে প্রাক্তনী সংসদের ভূমিকা, তলব উপাচার্যের

যাদবপুর: সোমবার মিছিল করবে এবিভিপি

যাদবপুর: বিজেপি নেত্রী দেবশ্রীর মন্তব্যে বিতর্কে ঘৃতাহুতি

‘বিশৃঙ্খলার আখড়া’ হয়ে উঠছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, 'কঠোর ব্যবস্থা' চান আচার্য, পড়ুয়াদের পাশে উপাচার্য

সিনেমা ঘিরে রণক্ষেত্র যাদবপুর, এবিভিপি-র সঙ্গে পড়ুয়াদের হাতাহাতি, বহিরাগতদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার, শ্লীলতাহানির অভিযোগ