কলকাতা: সিনেমার প্রদর্শনী ঘিরে বিতর্কের শুরু। যাতে ইন্ধন জুগিয়েছে ক্যাম্পাসের মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ। এখনও অধরা অভিযুক্তরা। এই পরিস্থিতিতে শ্লীলতাহানি নিয়ে বেঁফাস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন সেই রাতে ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়ানো বিজেপি নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী!
এদিন এই বিজেপি নেত্রী বলেন, যাদবপুরের আজাদি মানি না। আমাদের সরকার কেন্দ্রে আছে, আমরা বসে বসে দেখব? আমরা বুঝিয়ে দেব। তাঁর দাবি, আমাকে যে ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে, যে ভাবে গালিগালাজ করা হয়েছে, ওদের শ্লীলতাহানি করা যায়! অনেকেই পাল্টা বলছেন, কেউ যদি কারও উদ্দেশ্যে অশালীন শব্দ প্রয়োগ করেও, তাহলে কি অভিযুক্তকে শ্লীলতাহানির করার অধিকার পাওয়া যায়!
বিজেপি নেত্রীর মন্তব্যের নিন্দায় মুখর যাদবপুরের ছাত্রীরা।




বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেছেন, বিজেপি নেতা-নেত্রীদের কাছে এই বক্তব্যই আশা করা যায়। পোশাক আশাকের দিকে ওরা ঘুরিয়ে দেয়। শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপিকে শুধু ক্লিনচিট দেওয়াই নয়, গোটা ঘটনার দায় যাদবপুরের বিক্ষোভরত ছাত্রীদের ওপরই চাপিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব।
শ্লীলতাহানির অভিযোগে দেবশ্রীর সাফাই, শ্লীলতাহানির প্রশ্নই নেই। মেয়েদের কেউ ডাকেনি। মেয়েগুলো কেন আমাদের ছেলের গায়ে পড়েছে? তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, যেখানে প্রচুর লোক, এত ক্যামেরা সেখানে কী করে শ্লীলতাহানি হবে? কটাক্ষের সুরে যাদবপুরের ছাত্রীরা পাল্টা বলছেন, শ্লীলতাহানি আবার স্থান-কাল-পাত্র দেখে হয় নাকি! আরেক পড়ুয়া বলেছেন, শ্লীলতাহানি কি আর জায়গা দেখে হয়! একসময় মুখ্যমন্ত্রী বলতেন সাজানো ঘটনা। আজ বিজেপি নেতৃত্ব বলছে। এটা প্রত্যাশিত।

অন্যদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৪ এবিভিপি সমর্থকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, কাল পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানতে চাইব যে কী হল।
পুলিশ সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, শুক্রবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সব ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে। যেহেতু শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে, সেই কারণে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।



এদিকে দেবশ্রীর এহেন মন্তব্যে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, গেরুয়া শিবির গায়ের জোরে যাদবপুর দখল করতে চাইছে। সেজন্যই তারা বারবার দেশের প্রথম সারির এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করছে। প্রসঙ্গত, এর আগেও যাদবপুর নিয়ে পেশি আস্ফালনের অভিযোগ উঠেছিল গেরুয়া-শিবিরের বিরুদ্ধে। গত ফেবরুয়ারি মাসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন স্লোগান-বিতর্ক দানা বাঁধে, তখনও প্রায় হাতা গুটিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছিল বিজেপি। কালবিলম্ব না করেই দেশের প্রথম সারির এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেশদ্রোহীদের আখড়া বলে দেগে দিয়েছিল তারা। এবার সিনেমা প্রদর্শন নিয়ে বিতর্কেও তাঁদের অবস্থান কার্যত একই।