কলকাতা:  প্রথম দিন কাজে যোগ দিয়েই লুঠ! একাকী বৃদ্ধাকে বেঁধে ভরদুপুরে গৃহস্থের বাড়িতে তাণ্ডব নয়া ‘পরিচারকে’র দলবলের।


বাড়িতে পরিচারক রাখার কথা ভাবছেন? বুঝে-শুনে পা ফেলুন! না হলে, একদিন হয়তো আপনাকে সেই পরিচারকেরই অন্য রূপ দেখতে হতে পারে! হারাতে পারেন সব কিছু! পরিচারকের হাতে আপনার জীবন বিপন্নও হতে পারে!
কারণ, বুধবার দুপুরে ঠিক এরকমই অভিজ্ঞতা হয়েছে, নিউ আলিপুরের এক বৃদ্ধার!

পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার থেকে বাড়িতে পরিচারক হিসেবে কাজে যোগ দেয় এক যুবক। তার হাতেই বাড়ির সব দায়িত্ব দিয়ে, নিশ্চিন্তে কাজে চলে যান বৃদ্ধার ছেলে। তাঁর স্ত্রী দুপুরে মেয়েকে টিউশনে পৌছে দিতে যান।
বাড়িতে ছিলেন বৃদ্ধা ও নতুন পরিচারক। তদন্তে উঠে এসেছে, দুপুরে ওই পরিচারক শীলা খেমকাকে বলে, সে একটু নীচ থেকে আসছে। এই বলেই বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই কলিং বেল বেজে ওঠে!

পরিচারক ফিরে এসেছে ভেবে দরজা খোলেন বৃদ্ধা। কিন্তু দেখেন, বাইরে একজন অপরিচিত যুবক দাঁড়িয়ে আছে।
সেই সময়ই আচমকা বাইরে থেকে এসে, বৃদ্ধাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে যায় পরিচারক। তার সঙ্গে জোর করে ঢুকে পড়ে ওই আগন্তুক-সহ আরও দুই যুবক।

বৃদ্ধা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলে পরিচারক-সহ তিন জন। যাতে চিৎকার করতে না পারেন, সে জন্য মুখে গুঁজে দেওয়া হয় কাপড়! বৃদ্ধার মাথায় রিভলবার ঠেকিয়েও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ! দীর্ঘক্ষণ লুঠপাট চালিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

বিকেলে বৃদ্ধার পুত্রবধূ বাড়ি ফিরে দেখেন, শাশুড়ি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গোয়েন্দাদের কপালে! যা শুনে যে কোনও গৃহস্থেরও ঘুম উড়ে যেতে পারে!

এই ঘটনার নেপথ্যে একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যারা একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের টার্গেট করত। পরিচারকের ছদ্মবেশ নিয়ে চক্রের কোনও সদস্য কারও বাড়িতে কাজে ঢুকে পড়ত, বাড়ির লোকজনদের বিশ্বাস অর্জন করত। তারপর, সুযোগ বুঝে কোনও একদিন সঙ্গীদের নিয়ে অপারেশন।

গল্প হলেও সত্যির ‘ধনঞ্জয়’ও বাড়িতে নতুন কাজে এসেছিল। তার গতিবিধিও সন্দেহজনক ছিল।....
খাটের তলায় বাক্সের দিকে নজর ছিল। কিন্তু একজন পরিচারক থেকে সে আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছিল বাড়িরই একজন, আত্মার আত্মীয়, সকলের ভরসা!

রিয়েল আর রিল লাইফে যে অনেক ফারাক তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। প্রথম দিন কাজে যোগ দিয়েই, স্বমূর্তি ধারণ করল পরিচারক!

খেমকা পরিবারের দাবি, লুঠ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা ও প্রচুর গয়না!
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন নিউ আলিপুর থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দারা। লুঠেরা-চক্রের খোঁজে বিহারেও পৌঁছে গিয়েছেন তদন্তকারীরা।