কলকাতা: নরেন্দ্র মোদী যখন বারবার নগদহীন লেনদেনের পক্ষে সওয়াল করছেন, তখন মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন তুললেন ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের নিরাপত্তা নিয়ে। কৃষকদের অবস্থা নিয়েও এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদীর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন এবং বাস্তবের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, তা-এদিন তথ্য দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ৩৭,৯৪৫ গ্রামে ৩,৭৫০ গ্রামে ব্যাঙ্ক আছে। এতে মোবাইল ব্যাঙ্কিং। এমনিতে পোস্ট অফিস নেঅই, ব্যাঙ্ক নেই। স্মল সেভিংসের সর্বনাশ।
নোট বাতিলের পর থেকে দোকান-বাজারে মন্দা। বিক্রি বাট্টা তলানিতে। প্রধানমন্ত্রী প্লাস্টিক মানি অর্থাৎ ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডে কেনাকাটা করতে পরামর্শ দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ডেবিট, ক্রেডিট ফুল প্রুফ করেছেন? ক’দিন আগে হ্যাক হয়েছে। জানেই না কী করতে হবে।
কৃষকদের অবস্থা নিয়ে এদিন আলাদা করে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, কটা লোকের ডেবিট কার্ড আছে? চাষিরা ফসল তুলবে না লাইন দেবে?
বিজেপির অবশ্য পাল্টা দাবি, মুখ্যমন্ত্রী না দেখেই এই অভিযোগ করছেন। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সাফাই, ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। কলকাতা থেকে বসে বললে হবে না।
শনিবার মোরাদাবাদের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ম্যায় তো ফকির হুঁ। ঝোলা লেকে চল পড়ুঙ্গা। এই মন্তব্য নিয়েও এদিন খোঁচা দিতে ছাড়েননি মমতা। বলেন, উনি মোবাইল ফকির, পেটিএম ফকির, বিগ বাজারের বিগ বস। প্লাস্টিক খাও আর মরে যাও। মোদী বিজেপি একা খাবে, হবে না।
নরেন্দ্র মোদী যখন বারবার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল করছেন, তখন তাঁর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা কটাক্ষ, মোদীবাবু নিজে ভাবছেন, উনি ভগবানের থেকে বড় হয়ে গেছেন। তিনি যা করবেন, সেটাই মানুষকে মেনে নিতে হবে। বিজেপি অবশ্য এখনও ভোগান্তির কথা মানতে নারাজ। বরং তাদের দাবি, চাপ না দিলে কাজ হয় না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য নোট বাতিলের বিরোধিতাতেই থামেননি। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আরও একগুচ্ছ অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বলেন, আমরা ৫০০-র নোট চাইলে কেন্দ্র দিচ্ছে না। অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নায়ডু চাইলে পাচ্ছেন। বিজেপি সমর্থক রাজ্য হলে নোট পাচ্ছে। বৈষম্য চলছে।
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর তোলা এই অভিযোগও অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বলেছেন, কারও প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে না। উনি পাঁচশো টাকা পাঁচশো টাকা করে উতলা হয়ে গেছেন।
কালো টাকা নিয়েও এদিন মমতার গলায় শোনা গিয়েছে আক্রমণের সুর। বলেছেন, আমরা সবাই কালো, ওরা ফর্সা। সুইস ব্যাঙ্কে কত রেখেছে? পাল্টা কটাক্ষ উড়ে এসেছে বিজেপি শিবির থেকেও। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, সুইস ব্যাঙ্কে ওনার আছে উনি বলতে পারবেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূল-বিজেপি তরজা এখন তুঙ্গে।