কলকাতা: রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭। মৃত ৬। বেলেঘাটা আইডি, এনআরএসএস সহ শহরের আরও একাধিক বেসকরকারি হাসপাতালে চলছে করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসা। সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে আপতকালীন কোয়ারেন্টিন সেন্টার। প্রশাসনের তরফে সর্বোতভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে সচেতন করে ঘরেই আটকে রাখতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একাধিকবার হাতজোড় করে আবেদন করছেন, আগামী ২টো সপ্তাহ লকডাউন মেনে চলার জন্য। এরপরও রাজ্যের একাধিক জায়গায় লকডাউন অমান্য করে কোথাও জটলা, কোথাও জমায়েত এমনকি একসঙ্গে ধর্মীয় রীতি পালনের ছবিও সংবাদমাধ্যমে ধরা পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কার্যত হাতে পায়ে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী জনগণের উদ্দেশে বললেন, “একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা নিন। হাতজোড় করে, পায়ে পড়ে অনুরোধ করছি, রাজ্যের ক্ষতি করবেন না, দেশের ক্ষতি করবেন না।”
এদিন নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরের ২ সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আতঙ্কিত হবেন না। লকডাউনকে পুরোপুরি সফল করতেই হবে। অনেক জায়গায় রাস্তায় বেরোচ্ছেন মানুষ। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকুন, বাড়িতে থেকেও সুস্থ হওয়া যায়। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাজারে মিলছে, দূরত্ব বজায় রাখুন। অযথা ভিড় করবেন না। এই লড়াই সবাই মিলেই লড়তে হবে।”
পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ৫ লক্ষ টাকা অনুদান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
তিনি আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত বাংলায় করোনা আক্রান্ত ৩৭, ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন নিউমোনিয়ায় মৃত্যু, একজনের কিডনির অসুবিধা ছিল।
করোনা আক্রান্ত ৩১ জনের মধ্যে কম্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসক আছেন। চিকিৎসকের পরিবারের ৪ জন করোনা আক্রান্ত। করোনা আক্রান্ত ৪টি পরিবারের ১৭ জনও আক্রান্ত। এদের প্রত্যেকের চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি নিজামউদ্দিনের ঘটনায় করোনা আতঙ্ক আরও বেড়েছে। কেন্দ্র ও কেজরিবাল, একে অপরকে দায়ী করছে। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, “বাংলা থেকে ৭১ জন গিয়েছিল, ৫৪ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৪০ জন বিদেশি ছিলেন। বাঁকুড়া, উত্তর দিনাজপুর, মগরাহাট থেকে কারা গেছিলেন? কেউ গেছিলেন কিনা খোঁজ নেওয়া হয়েছে। বাকিদের খুঁজে বার করে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে”। আরও একধাপ গিয়ে তাঁর অনুরোধ, ১৩ মার্চ দিল্লির নিজামুদ্দিনে ধর্মীয় সমাবেশে জমায়েতে যদি কেউ যান, তাহলে সরকারকে তথ্য দিন।
মহামারী ঠেকাতে এখনও পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, “কাল পর্যন্ত ১ লক্ষ ১১ হাজার ৩৯৪ পিপিই দিয়েছি। ৪২ হাজার ২৯৬ এন-৯৫ মাস্ক দেওয়া হয়েছে হাসপাতালগুলিকে। আরও দেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৩৬৩ লিটার স্যানিটাইজার।
বুধবার আরও একবার তিনি হাতজোড় করে বলেন, “রাস্তায় বসে আড্ডা মারা বন্ধ করুন। ঘরে বসে মন্ত্র শুনুন, আজান করুন, প্রার্থনা করুন। দেশে লকডাউন, অর্থনীতিতেও লকডাউন। রাস্তায় বেরিয়ে ক্ষতি করবেন না।”