কলকাতা: নোট বাতিল ইস্যুতে ফের সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবারও মোদী সরকারকে উৎ‍খাতের ডাক দিলেন।
শুক্রবার, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা গেল জাতীয় সরকার গড়ার ডাক। মমতা বলেন, রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করব দেশকে বাঁচান। ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট তৈরি করা হোক। এখন যে আছে তাকে দিয়ে হবে না। যে গাছে বসে আছে, সেই গাছেরই ডাল কেটেছে। মহামতি কালীদাস, নিরো।
এখানেই থেমে না থেকে আরও একধাপ এগিয়ে বিজেপির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হঠিয়ে তাঁর জায়গায় জেটলি, আডবাণীকে বসানোর জোর সওয়াল করেন মমতা। তিনি বলেন, ন্যাশনাল গভর্নমেন্টে আডবাণী, রাজনাথ, জেটলিকে দায়িত্ব দিলে আমার আপত্তি নেই। এই বিষয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানালেন।  মমতা বলেন, রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করব দেশকে বাঁচান। হয় ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট না হল কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতি শাসন।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, নোট বাতিল কাণ্ডের জেরে বিজেপির মধ্যে একাংশ ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষোভকে হাতিয়ার করে দলের মধ্যেই মোদিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করলেন মমতা। সেই মতোই বিকল্প নেতৃত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করলেন।
শুক্রবার, টাউন হলে মন্ত্রী ও বিভিন্ন দফতরের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই একেবারে তথ্য তুলে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেন নোটের ক্ষত কতটা গভীর। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ৫৫০০ কোটির রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চাকুরে, গৃহস্থ, দোকানদার, চাষি--এরা মিলে ৬০ শতাংশ রয়েছে। তিনি যোগ করেন, ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ সরাসরি সমস্যায় পড়েছেন। ৮১.৫ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছে। মমতার মতে, নোট বাতিলের ফলে জিনিসের দাম বাড়বে, দুর্ভিক্ষ হবে।
বিজেপি অবশ্য নিজেদের অবস্থানে অনড়। তাদের পাল্টা বক্তব্য, নোট বাতিলের জেরে সমস্যা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, সেটা সাময়িক। ভবিষ্যতে সুফল মিলবে।
পাশাপাশি, বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন বা বিআইএফআর তুলে দেওয়া নিয়েও মোদী সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যান মমতা। বলেন, চিঠি দিয়ে কেন্দ্র বলছে বিআইএফআর তুলে দেওয়া হল। তাঁর প্রশ্ন, এখন পুরনো কেসের কী হবে? মমতা যোগ করেন, কেন্দ্র বলছে, নতুন করে চালু করতে হবে। কিন্তু, বিআইএফআর ভেঙে দেওয়ায় শ্রমিক-মজদুরদের চরম সমস্যা হবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, বিআইএফআরের অধীনে রাজ্যে চারশোর কাছাকাছি কারখানা রয়েছে। রাজ্য সরকারের মতে, বিআইএফআর তুলে দেওয়ায় এই সব কারখানা এবং কয়েক লক্ষ শ্রমিকের ভবিষ্যত এখন অথৈ জলে। কারণ, বিকল্প ব্যবস্থা কী তার কোনও দিশা দেখায়নি কেন্দ্র। শুক্রবার, টাউন হলের বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, রুগ্ন শিল্প সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এই বোর্ড গঠন করা হয়। ১৯৮৫ সালে তৈরি হওয়া ‘দ্য সিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পানিজ অ্যাক্ট’ অনুযায়ী ১৯৮৭ সালে গঠিত হয় বিআইএফআর। যা কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ। অরবিন্দ মিলস, ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড, নর্থ ইস্টার্ন রিজিওনাল এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কর্পোরেশন, স্কুটার ইন্ডিয়া-র মতো বিভিন্ন সংস্থা, বিআইএফআর -এর হাত ধরে নতুন জীবন পায়।
শুধু মমতা নন, বিআইএফআর তুলে দেওয়াতে মোদী সরকারের সমালোচনায় সরব বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনও। আইএনটিইউসি রাজ্য সভাপতি রমেন পাণ্ডে বলেন, শ্রমজীবী মানুষর উপর আঘাত। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব। এর অর্থ হল কোম্পানির পুনরুজ্জীবন বা শ্রমিকদের আশা থাকছে না। পুনরুজ্জীবন সম্ভব না হলে, সংস্থা বিক্রি করত, টাকা ফেরত দিত, শ্রমিকদের সেই টাকা ফেরতের আশাও থাকছে না।