কলকাতা: পরিষদীয় দলনেতা বাছতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে প্রদেশ কংগ্রেস। উপস্থিত থাকবেন নবনির্বাচিত বিধায়করা। থাকবেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং একজন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় বৃহৎ‍ দল হিসেবে কংগ্রেসই পাচ্ছে বিরোধী দলনেতার পদ। তাদের পরিষদীয় দলনেতাই সম্ভবত হবেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু, কে হবেন? জল্পনা তুঙ্গে বিধান ভবনে।


২০০১ থেকে ২০১৬। দীর্ঘ পনেরো বছর পর, বাংলায় ফের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এল কংগ্রেস। প্রধান বিরোধী দলনেতার কুর্সিও পেতে চলেছে তারা।

সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী, বিরোধী দলনেতাকে ছায়া মুখ্যমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। এই মর্যাদার পদে শেষবার কংগ্রেসের তরফে দায়িত্বে ছিলেন অতীশ সিংহ। এবার কে বসবেন? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের অন্দরে শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি।

দৌড়ে প্রথম সারিতে রয়েছে আব্দুল মান্নান এবং মানস ভুঁইয়া। দীর্ঘ পরিষদীয় অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দু’জনই সুবক্তা হিসেবে পরিচিত।

কিন্তু, গোল বেঁধেছে, প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে এই দু’জনের রসায়নে। বিধান ভবনের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, অধীর চৌধুরীর সঙ্গে মানস কিংবা মান্নান, কারওরই সম্পর্ক মধুর নয়। সেক্ষেত্রে, অধীর কি চাইবেন, তাঁর মুর্শিদাবাদ থেকে জিতে আসা কাছের লোককে পরিষদীয় দলনেতা করতে?

এর আগে, কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা ছিলেন মুর্শিদাবাদেরই মহম্মদ সোহরাব। এবার তিনি নির্বাচনে হেরে যাওয়ায়, মুর্শিদাবাদের অন্য কাউকে পরিষদীয় দলনেতা হিসেবে বেছে নেওয়াটা অতটা সহজ হবে না বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

প্রদেশ নেতৃত্বের একাংশের সাফ কথা, এমন কাউকে বাছতে হবে, যিনি বিধানসভার অন্দরে দলকে সঠিক উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার পাশপাশি বামেদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হতে পারবেন।

এই মতকে কংগ্রেসের যাঁরা সমর্থন করেন, তাঁদের দাবি, ভোট শেষ হলেও বাম-কংগ্রেস জোট অপ্রাসঙ্গিক হয়নি। যে ইস্যু নিয়ে একসঙ্গে আন্দোলন হয়েছে, সে সব ইস্যু এখনও প্রাসঙ্গিক। তাছাড়া, জোট করে ভোটের ময়দানে লাভবান হয়েছে কংগ্রেসই।

জোট বেঁধে লড়ে সিপিএম পেয়েছে ১ কোটি ৮ লক্ষ ২ হাজার ৫৮টি ভোট। জিতেছে ২৬টি আসন। অথচ, ৬৭ লক্ষ ৯৩৮টি ভোট পেয়ে কংগ্রেস জিতেছে ৪৪টি আসন।

ভোটের এই জটিল অঙ্কে বাজিমাত করে বিধানসভায় পনেরো বছর পর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে কংগ্রেস।

তৃণমূলের জন্মের পর ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে তারাই হয়ে ওঠে প্রধান বিরোধী দল। বিরোধী দলনেতা হন পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৬ সালে বিরোধী দলনেতা হন তৃণমূলের পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ২০১১তে, বিরোধী আসন থেকে শাসকের দায়িত্ব পায় তৃণমূল। সেবার বিরোধী দলনেতা হন সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র। এবার কে হবেন?

এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি করতে প্রদেশ নেতৃত্ব ব্যর্থ হলে শেষ পর্যন্ত বল যাবে সনিয়া গাঁধীর কোর্টে। ইতিমধ্যেই কেরল কংগ্রেস তাদের পরিষদীয় দলনেতা বাছাইয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে সনিয়া গাঁধীকে। সম্ভবত একই পথে হাঁটতে চলেছে এ রাজ্যের কংগ্রেসও।