কলকাতা: ফ্রস্ট বাইটের সমস্যা থাকলেও, সুনীতা হাজরার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। বেলঘরিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বারাসতের এই পর্বতারোহী। তাঁর কাছে এখন ভগবান, ব্রিটিশ অভিযাত্রী লেসলি!


ব্রিটিশ অভিযাত্রীর বাড়িয়ে দেওয়া সাহায্যের হাত আর নিজের অফুরন্ত প্রাণশক্তি। এই দুইয়ের জেরেই তিনি আজ মৃত্যুর দুয়ার ছুঁয়েও পরিজনদের কাছে। অদম্য এই জীবনি-শক্তির নাম সুনীতা হাজরা।

স্বামী, সন্তান, সবাইকে রেখেই এভারেস্ট জয় করতে গিয়েছিলেন। সবকিছুই হিসেবমতো চলছিল। কিন্তু এভারেস্টের বুকে আচমকাই একদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হন সুনীতা। সেইসময় তিনি দেখা পান সাক্ষাৎ ভগবানের!

সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে সুনীতা জানান, লেসলি তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচান। সেই সময় কার্যত ঝুলছিলেন তিনি, জানিয়েছেন সুনীতা। সুনীতা তখন লেসলিকে তাঁকে বাঁচানোর কাতর আর্জি জানান, কারণ তাঁর বাড়িতে অপেক্ষায় রয়েছে তাঁর সন্তান। তখন লেসলি নিজের অক্সিজেন দিয়ে দেন সুনাতীকে। নিজের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। নিজের গ্লাভস সুনীতাকে দেন। একপাশে লেসলি, একপাশে ছিল সুনীতার শেরপা। সুনীতা জানান সেই সময় সবচেয়ে কম ৫ পয়েন্টে অক্সিজেন নিচ্ছিলেন তিনি। যাতে অক্সিজেন বাঁচিয়ে রাখা যায়।

বিপর্যয়ের মুখে পড়েও যে কোনও মূল্যে বাঁচতে চেয়েছিলেন বারাসতের এই বীরাঙ্গনা। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পড়তে দেননি শেষ নিঃশ্বাস।

এভারেস্টে বুকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হয়েছিল ইঞ্চিতে-ইঞ্চিতে! অসম সেই লড়াইয়ে আজ জয়ী সুনীতা। ঘরে ফিরলেও, এখন তাঁর ঠিকানা বেলঘরিয়ার এক হাসপাতাল।
বরফের কামড়ে শরীরের নানা অংশ দগদগে ঘায়ে ভর্তি হয়ে গেছে। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, এখন অনেকটাই স্থিতিশীল তাঁর অবস্থা। সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় রাখা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ডে। দেখছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

সুনীতার মরণপণ লড়াইয়ের কাছে শেষমেষ হেরে গিয়েছে পরিবারের আশঙ্কা। ছোট্ট আর্য অবশেষে ফিরে পেয়েছে তার মাকে। এভারেস্টের বুকে শুয়েও, এটাই তো একমাত্র চাওয়া ছিল সুনীতার!

মৃত্যুকে জয় করার আনন্দ আছে। পরিজনদের কাছে পাওয়ার আনন্দ আছে। তবুও যেন হাসতে পারছেন না সুনীতা। বিপর্যয়ের বিবরণ দিতে গিয়ে বারবার ধরে আসছে তাঁর গলা। যাঁদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন, সেই তাঁদের অনেকেই যে আজ নিথর!