কলকাতা: ১২ জানুয়ারির পর ২৩ জানুয়ারি। স্বামী বিবেকানন্দের পর সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে সামনে রেখে ফের সরগরম হতে চলেছে ভোটের বাংলা। ২৩ জানুয়ারি কলকাতা আসবেন প্রধানমন্ত্রী। নেতাজিকে নিয়ে নতুন গ্যালারির উদ্বোধন করবেন তিনি। অন্যদিকে, ওই দিনই বিশেষ পদযাত্রা করবেন মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়।


কেন্দ্রের নতুন ঘোষণায় নেতাজিকে নিয়ে আবার রাজনীতির দড়ি টানাটানি শুরু। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানায় এবার থেকে নেতাজির জন্মদিন পরাক্রম দিবস হিসেবে উদযাপিত হবে। পাশাপাশি, নেতাজির ১২৫-তম জন্মজয়ন্তীর আগে ঐতিহ্যবাহী হাওড়া-কালকা মেলের নাম বদলে নেতাজি এক্সপ্রেস করার কথা ঘোষণা করেছে ভারতীয় রেল।


গতকাল রেলবোর্ডের তরফে রেলের সমস্ত বিভাগের জেনারেল ম্যানেজারদের এই তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়েছে, গত ১৪ জানুয়ারি, হাওড়া-কালকা মেলের নাম বদলের প্রস্তাব আসে রেলমন্ত্রকের কাছে। সেই প্রস্তাব মেনেই হাওড়া-কালকা মেলের নাম বদলে নেতাজি এক্সপ্রেস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


এদিকে, ২৩শে জানুয়ারিকে জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবিতে ফের সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, বারবার বলছি, ২৩ জানুয়ারিকে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করতে হবে। সেটা কেন্দ্র করুক।


ভোটের মুখে বিজেপি এবং তৃণমূলের এই নেতাজি ভক্তিকে কটাক্ষ করেছে বাম-কংগ্রেস। লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যেটা করছে, ভারতের বড় মানুষদের, নানা কায়দায় তাঁদের বিজেপির মতাদর্শ মানার লোক বলে মানাতে চাইছে, বিজেপি মানেই নেতাজি, এটা বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সংকীর্ণ রাজনীতি চলছে।


বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের দাবি দেশপ্রেম দিবস। কেন্দ্র মানুষের আবেগকে মর্যাদা দেয়নি। বিজেপি ও তৃণমূল দুটো দলই নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করছে।


২০২২ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একশো পঁচিশতম জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হবে। সেই মেগা ইভেন্টের প্রস্তুতি ক্রমশ যেন বদলে যাচ্ছে ভোট ফ্যাক্টরে। তাল ঠুকছে সব পক্ষ।


সমাজের বিভিন্ন মহলের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। ভোটের বাংলায় বাংলা ও বাঙালি যখন অন্যতম প্রধান ইস্যু, তখন নেতাজি আবেগ ছাড়তে রাজি নয় কেউ।


কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক সূত্রে খবর, ২৩ জানুয়ারি একদিনের কলকাতা সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের অন্যতম অভিজ্ঞান ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে নেতাজিকে নিয়ে একটি স্থায়ী গ্যালারির উদ্বোধন করবেন তিনি। ওই গ্যালারিতে নেতাজির ১২৫টি ছবি থাকবে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীদের নিয়ে আরও একটি গ্যালারির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিনই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে নেতাজি শীর্ষক একটি আলোচনাসভায় পৌরহিত্য করবেন তিনি।


এপ্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় বলেন, ভোটের সময় অনেকেই আসছেন। উনাকেও ওয়েলকাম। শুধু দাঙ্গাবাজ গুন্ডাদের ওয়েলকাম নয়।


২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূলও। ২৩ জানুয়ারি শ্যামবাজার পাঁচমাথা মোড় থেকে পদযাত্রা করবে তৃণমূল। ময়দানে নেতাজি মূর্তি পাদদেশে শেষ হবে পদযাত্রা। পদযাত্রার পুরোভাগে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাড়ে ৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানাবেন তৃণমূল নেত্রী।


অর্থাৎ‍ নেতাজির জন্মদিবস উপলক্ষ্যে তেড়েফুঁড়ে উঠেছে সব পক্ষই! কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গ রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন যেভাবে ধর্মকে ঢোকানো হয়েছে, তা দেখে কোনওদিনই খুশি হতে পারতেন না সুভাষচন্দ্র বসু। কারণ তিনি মনে করতেন, ‘‘ধর্মকে সম্পূর্ণরূপে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়া উচিত৷ ধর্ম ব্যক্তি বিশেষের হওয়া উচিত৷ ব্যক্তি হিসাবে মানুষ যে ধর্ম পছন্দ করে তা অনুসরণ করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে৷ কিন্তু ধর্মীয় বা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের দ্বারা রাজনীতি পরিচালিত হওয়া উচিত নয়৷ তা পরিচালিত হওয়া উচিত শুধুমাত্র অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক বিচার বুদ্ধি দিয়ে৷’’