কলকাতা: ফের বাড়ল পঞ্চায়েত ভোটে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ। আরও একদিন বাড়ল ভোট-প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ। আজকের মতো শুনানি শেষ, কাল ফের শুনানি।
পঞ্চায়েত ভোট কবে হবে বা ঘোষিত সূচি অনুযায়ী ১ মে কি ভোট করা সম্ভব কি না-- এই প্রশ্ন জাগিয়ে রেখে ভোট প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের মেয়াদ বুধবার পর্যন্ত বাড়াল কলকাতা হাইকোর্ট। এই প্রেক্ষাপটে অনেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না। তাঁদের দাবি, গলদ রয়েছে একেবারে গোড়াতেই! ত্রুটি রয়েছে কমিশনের ঘোষিত নির্ঘণ্টে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, প্রথম দফার পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা ১ মে। মনোনয়ন দাখিল শেষ হয়েছে ৯ এপ্রিল। অর্থাৎ দু’য়ের মাঝে ২১ দিনের ব্যবধান রয়েছে। বিধি অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ও ভোটের মধ্যে ন্যূনতম ২১ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ দিনের ব্যবধান থাকতে হয়।
এক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন দাখিল শেষ ও ভোট শুরুর মধ্যে ২১ দিনের সেই ন্যূনতম ব্যবধানটুকুই রেখেছে। এই প্রেক্ষিতে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে কি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ধরে নিয়েছিলেন, এরাজ্যে মনোনয়ন পর্বে কোনও অশান্তি হবে না? মনোনয়ন দাখিল, স্ক্রুটিনি, প্রত্যাহার সব মসৃণভাবে হয়ে যাবে? তার জন্য কোনও অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হবে না?
বিরোধীদের দাবি, গত কয়েকটি পঞ্চায়েত ভোট দেখে এমনটা ভাবার কোনও কারণই নেই। এরাজ্যে যখনই পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে, তখনই রক্ত ঝরেছে, প্রাণ গিয়েছে। তারপরও রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হাতে অতিরিক্ত কোনও সময় রাখলেন না কেন? ২০০৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনে স্পষ্ট বলা আছে,
ইচ্ছুক প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানতে পারলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং অফিসারকে এসডিও-র অফিসে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দিতে পারেন। যাঁর মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার এক্তিয়ার থাকবে। এছাড়া মনোনয়ন দাখিলের সময়সীমা একদিন বাড়াতেও পারেন।
কিন্তু, এই ক্ষমতা হাতে আছে এটা জেনেও, রাজ্য নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন দাখিল এবং ভোট শুরুর দিনের মধ্যে ব্যবধান কেন ২১দিনের বেশি রাখলেন না? তাহলে কি তড়িঘড়ি ভোট শেষ করানোর চাপ ছিল? নানামহলে উঠছে এই প্রশ্ন।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৫ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মনোনয়ন দাখিল করা যাবে মহকুমাশাসকের অফিসে। কিন্তু, ৯ এপ্রিল মনোনয়ন দাখিলের সময়সীমা একদিন বাড়াতেই কমিশনকে চিঠি দেয় রাজ্যের বিশেষ সচিব এবং তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা যুক্তি দেখান, মনোনয়নের সময়সীমা একদিন বাড়ালে ভোটের সঙ্গে ২১ দিনের ন্যূনতম ব্যবধান রাখা সম্ভব হবে না।
বিরোধীদের দাবি, এই অস্ত্র তো রাজ্য নির্বাচন কমিশনই তুলে দিয়েছে! তার হাতে মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ানোর ক্ষমতা আছে জেনেও, তার সদ্ব্যবহারের রাস্তা খোলা রাখেনি। তাহলে কি চাপের মুখে কোনওমতে তড়িঘড়ি ভোট সেরে ফেলতে চাইছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার? সেই তাড়াহুড়োতেই কি তিনি এরাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে রক্তপাতের ইতিহাস ভুলে গেছিলেন? প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।