কলকাতা: আদি-নব্যর দ্বন্দ্ব নতুন নয়। এবার গোদের উপর বিষফোঁড়া, তৎ‍কাল তৃণমূল! তৎ‍কাল তৃণমূল নিয়ে সতর্কবার্তা দিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নজরুল মঞ্চের সমাবেশ থেকে তিনি বলেন, তিন ধরনের তৃণমূল। পুরনো, যাঁরা অনেক দিন ধরে করছেন। নব্য, যাঁরা ক্ষমতায় আসার পরে মমতার কাছে এসেছেন। আরেকটা হল তৎ‍কাল তৃণমূল কংগ্রেস। যাঁরা কাল এসে ভাবছেন, আজকে পদ পেয়ে যাবেন। যাঁরা নীতি বোঝেন না। আদর্শ বোঝেন না। শেষ মুহূর্তে সিট পেতে কাটতে হয় তৎকাল টিকিট। তৃণমূল মহাসচিবের অভিযোগ, অনেকে হালে দলে ঢুকে, তৎকাল কোটায় পদ পেতে চাইছেন! বলেন, এই তৎ‍কাল তৃণমূলদের উপর নজর রাখুন। নব্যরা এসেছে আসুক। ভরসা করুন পুরনোদের উপর। এ নিয়ে পাল্টা কটাক্ষের সুর বিরোধীদের গলায়। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, আসলে দলের অস্তিত্ব নিয়ে সঙ্কট। যাঁরা আজ নেতা রয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই তো তৎ‍কাল। পুরনো সবাই তো বসে গিয়েছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটা ওপড়াতে শুক্রবার, কালীঘাটের কোর কমিটির বৈঠক থেকে কড়া বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সতর্ক করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার তিন বিধায়ককে। বুঝিয়ে দেন, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বন্ধ না করলে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এর একদিন পরেই, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে সতর্কবার্তা তৃণমূলের মহাসচিবের। কাঁটা এখন তৎকাল তৃণমূল! আত্মসমালোচনার সুর ধরা পড়ল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সির গলায়। বলেন, কোনও নেতার ছেলেকে কেউ স্কুলে পৌঁছে দিচ্ছে, কেউ নেতার স্ত্রীকে সাহায্য করছেন। তাঁরাই পদ পাচ্ছেন। অথচ, যাঁরা কর্মী তাঁরা পাচ্ছেন না। মনে রাখবেন, এ সব দল খেয়াল রাখছে। সাধারণ মানুষের ভোটে জিতছেন, আর জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর ভাবছেন, পরিবারের লোকেরাই সব কিছু পাবে, এ সব চলবে না। যারা চোখের জল মুঝে তৃণমূল করে, তারাই আসল তৃণমূলকর্মী এ নিয়েও পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিরোধীরা। দিলীপ ঘোষ বলেন, তৃণমূলে তো স্বজনেরই পোষণ হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ভাই ভাইপো নিয়ে কটাক্ষ। বহু নেতা, তাঁদের স্ত্রী পুত্রদের তৃণমূলে আনছে, যাতে করে খেতে পারে। এরকম রাজনীতি আমাদের রাজ্যে আগে ছিল না। দুর্নীতি রুখতেও এ দিন বার্তা দেন সুব্রত বক্সি। বলেন, কেউ কেউ ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছেন। এ সব চলবে না। এমন সব কাণ্ড করবেন, তারপর বিপদে পড়লে বলবেন ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরকম হলে আপনি ফেসেই থাকবেন। দল দায়িত্ব নেবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের দলে নিয়ে কোনও ভুল করেননি। কিন্তু এমন কিছু করবেন না যে তৃণমূলনেত্রীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ নিয়েও কটাক্ষ করতে দেরি করেনি বিরোধীরা। দিলীপ ঘোষ বলেন, দল যখন দুর্নীতিতে ডুবে গেছে তখন সুব্রত বাবুর চেতনা হয়েছে। বিধায়ক, সাংসদ, বড় নেতাদের ইডি-সিবিআই জেরা করছে। সিনিয়ররা দুর্নীতিগ্রস্ত। বাকিরা কী করছে বোঝাই যায়। এ সব কথা বলার আর জায়গা নেই। আইন ব্যবস্থা নিলে পার্টি বাঁচাতে গেলেও পারবে না। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বার্তা, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, উন্নয়নের কাজকে হাতিয়ার করে পঞ্চায়েত ভোটে জিততে হবে। তা হলেই তার ডিভিডেন্ড মিলবে লোকসভা নির্বাচনে। পাল্টা বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছে, এখন এ সব বলে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছে তৃণমূল।