কলকাতা: রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের কড়া বার্তার পরও ফেরেনি হুঁশ। অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে বিল না মেটাতে পারায় মুমূর্ষু রোগীকে আটকে রাখা এবং তার জেরে মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ!
১৬ ফেব্রুয়ারি, পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ডানকুনির বাসিন্দা সঞ্জয় রায়। অভিযোগ, অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, সিটি স্ক্যানের নাম করে তাঁকে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। পরিবারের দাবি, লাফিয়ে লাফিয়ে চড়তে থাকে বিল। ৬ দিনে যা পৌঁছয় ৭ লক্ষ ৪১ হাজার টাকায়।
মৃত সঞ্জয়ের মায়ের দাবি, চাপ দিয়ে (হাসপাতাল) সব আদায় করেছে। নগদে ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা মিটিয়ে দেয় তারা। বাকি টাকাও দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। শেষে চেক ও ফিক্সড ডিপোজিটের সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার পরে, রোগীকে ছাড়া হয়।
সঞ্জয়ের পরিবারের দাবি, খরচের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার তারা এসএসকেএমে একটি বেডের ব্যবস্থা করে। বিকেলে সেকথা অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
যদিও অ্যাপোলোর দাবি, রোগীকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়ার কথা তাদের জানানো হয় সন্ধের পর। অ্যাপোলোর সিওও জয় বসুর দাবি, সন্ধে সাতটায় (রোগীকে সরানো) কনফার্ম করে। রাত সাড়ে ন’টায় পেশেন্ট এসএসকেএমের বেডে যায়। যদিও রোগীর আত্মীয়র দাবি, রাত ১০টার পর অ্যাপোলো থেকে বেরিয়েছি। রাত সাড়ে দশটায় এসএসকেএমে পৌঁছেছি।
এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও মিলছে না অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষের দাবি। সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাত ১১টায় আসে। ক্রিটিকাল ছিল।
রোগীর পরিবারের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, বিল মেটাতে দেরি হওয়ায়, ছাড়াই হয়নি সঞ্জয়কে। এক আত্মীয় জানান, বলল বিল দিন, তারপর নিয়ে যান। আমরা বললাম আমরা আছি। ওকে এসএএসকেএম যেতে দিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছাড়ল না।
শেষপর্যন্ত অ্যাপোলো থেকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলেও বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান সঞ্জয়। মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা সঞ্জয়কে বাঁচানোর চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখিনি।
সকালে হাসপাতালে পৌঁছে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার। হাসপাতালে পৌঁছন মদন মিত্র। সব কথা শুনে তিনি সটান ফোন করেন অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষকে। তৃণমূল নেতার হুঙ্কার, তোমরা শ্মশান তৈরি করেছ। এই শ্মশানে যাওয়ার জন্য টাকা দিতে হয় মানুষকে। তোমার শ্মশানের থেকে আমার কেওড়াতলা শ্মশান অনেক ভাল।
যদিও অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, টাকার জন্য তাঁরা সঞ্জয়কে আটকে রাখেনি! মৃত্যুর পর এখন অ্যাপোলো বলছে, তারা টাকা ফেরত দিয়ে দেবে!
কিন্তু, সঞ্জয়কে কি ফেরাতে পারবেন তাঁরা? শূন্য হয়ে যাওয়া মায়ের কোল পূরণ হবে কোনওদিন? প্রশ্ন পরিবারের।