কলকাতা: চিকিৎসার গাফিলতিতে কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে বুধবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল একবালপুরের সিএমআরআই হাসপাতাল। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বিভিন্ন বিভাগ। মাটিতে আছড়ে ভাঙা হল ল্যাপটপ-কম্পিউটার। বাধা দিতে গিয়ে বেধড়ক মার খেলেন হাসপাতালে কর্মীও।
মঙ্গলবার রাতে পেটে ব্যথা নিয়ে সিএমআরআই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় একবালপুরের বাসিন্দা সাইকা পারভিনকে। পরিবারের দাবি, হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, মেয়েটির অন্ত্রে ফুটো আছে। অপারেশন করতে হবে। আর সেজন্য দেড় লক্ষ টাকা লাগবে।
পরিবারের আরও দাবি, এরপর থেকে তাঁর শরীরের অবস্থা নিয়ে কিচ্ছু জানানো হয়নি। এরপর সকালে অত্যন্ত রুক্ষভাবে ফোন করে হাসপাতালের তরফে বলা হয়, মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। দেহ নিয়ে যান। নাহলে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হবে।
সাইকার পরিবারের দাবি, টাকার জন্য সাইকাকে দীর্ঘক্ষণ বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়েছিল। এই গাফিলতির জেরেই তার মৃত্যু হয়েছে। যদিও, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ। সিএমআরআই জনসংযোগ আধিকারিক পিয়াসি চক্রবর্তী এদিন জানান, অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় আনা হয়। অপারেশনের আগে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।
এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সাইকার পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আচরণের কথা শুনে খেপে ওঠেন স্থানীয়রাও। সকাল ন’টা নাগাদ শতাধিক লোক হাসপাতালে চড়াও হয়। শুরু হয় তুলকালাম। লন থেকে ফুলের টব তুলে ছুড়ে মারা মারা হয় কাচের দরজায়।
লাঠিসোঁটা দিয়ে মুহুর্মুহু আঘাত করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় দরজা। দরজা পেরিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। একে একে তছনচ করে দেওয়া হয় বিলিং, অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতো বিভাগগুলি। মাটিতে আছড়ে ফেলা হয় ল্যাপটপ, কম্পিউটার। নষ্ট করে দেওয়া হয় নথিপত্র।
কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী। কিন্তু, মারমুখী হামলাকারীদের সামনে কয়েকজন পুলিশকর্মী ছিলেন কার্যত অসহায়। তাদের পেরিয়েই ফের হাসপাতালে ঢুকে দ্বিতীয় দফায় ভাঙচুর শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, হাসপাতালের বহু ও চিকিৎসক ও রোগীরা প্রাণভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে পালান। শিকেয় ওঠে পরিষেবা।
সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন ডিসি সাউথ প্রবীণ ত্রিপাঠী। একবালপুরে পাঠানো হয় সাউথ ডিভিশনের বিভিন্ন থানার ওসিদেরও। এর মধ্যে বিক্ষোভকারীরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ডায়মন্ডহারবার রোড অবরোধ করে।
শেষমেশ বুঝিয়ে সুঝিয়ে অবরোধ তোলে পুলিশ। তবে একাধিক বিভাগ পুরোপুরি তছনছ হয়ে যাওয়ায় সিএমআরআইতে পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। আপাতত নতুন করে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।