আজকের দিনটাই সিমলায় আমাদের শেষ দিন।
কাল সকালে রওনা হতে হবে মানালির পথে। আজ থেকে আমাদের সঙ্গে নতুন গাড়ি। আজ সারাদিন ঘোরাবে, কাল নিয়ে যাবে মানালি। সিমলা থেকে মানালি প্রায় ২৬৫ কিমি, পাহাড়ি পথে প্রায় ৯ ঘণ্টার জার্নি। যাওয়ার পথে দেখা হবে ৫-৬টি স্পট। মানালিতে দু’দিন ঘোরানোর পর আমাদেরকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ফিরে আসবে সিমলায়। চারদিনের জন্য গাড়ি নেবে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। বেশ কয়েক জায়গায় কথা বলে দেখেছি, এর থেকে কমে হবে না।


সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ রওনা হলাম। তৃতীয় দিনে আমাদের প্রথম গন্তব্য, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডি। সিমলা মল রোড থেকে কার্ট রোড ধরে অ্যাডভান্সড স্টাডি-র দূরত্ব বড়জোর ৪ কিলোমিটার। সময় লাগল ২৫ মিনিটের মতো। গাড়ি যেখানে নামাল, সেখানেই বাঁদিকে টিকিট কাউন্টার। ৫ বছরের ওপরে হলেই মাথাপিছু ৪০ টাকা।

ভাইসরয় প্রাসাদ দেখে বুঝতে পারলাম, এখানে না এলে সিমলা সফর অসম্পূর্ণ। সবুজ পাহাড়ি মনোরম পরিবেশের মধ্যে নীল আকাশ মাথায় করে দাঁড়িয়ে বিশাল প্রাসাদ।
সামনে বিশাল সবুজ লন, নুড়ি বিছোন পথ। যেদিকেই ক্যামেরা ঘোরানো যায়, সেদিকেই অসাধারণ ফ্রেম। স্বাধীনতোত্তর ভারতে এটিই ছিল ভাইসরয়-এর নিবাস।


১২৯ বছরের পুরনো ব্রিটিশ আমলের প্রাসাদে ঢুকে চোখ জুড়িয়ে গেল। প্রাসাদের ভেতরে পুরো কাঠের কাজ। রাজকীয় মহিমা। প্রাসাদের ভিতরের একটি অংশই শুধু জনসাধারণের জন্য খোলা। তবে নিজে ঘুরে দেখা যাবে না। গাইড ঘুরিয়ে দেখালেন কাঠের কারুকাজ, লাইব্রেরি, সেমিনার রুম, ফটো গ্যালারি। সঙ্গে ইংরেজি ও হিন্দি বিবরণ। ভেতরে সযত্নে রাখা ভাইসরিগ্যাল চেয়ার, গ্র্যান্ডমাদার্স ক্লক। দেওয়াল জুড়ে পুরনো ভারতের কথা ও ছবি। পরাধীন বারতের বহু ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল এখানেই।

স্বাধীনতার পর এই প্রাসাদের নাম হয় রাষ্ট্রপতি নিবাস। গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে এখানে আসতেন রাষ্ট্রপতি। ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ঠিক করেন, উচ্চশিক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে এই প্রাসাদকে। ১৯৬৫ সালের ২০ অক্টোবর The Indian Institute of Advanced Study-র উদ্বোধন করেন রাধাকৃষ্ণন। এখন এখানে হয় প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণার কাজ।

মাশোবরার আপেল বাগান...
ভাইসরয় প্যালেস ঘোরা হলে দেখে নিতে পারেন আর্মি মিউজিয়াম। হিমালয়ান বার্ড পার্ক। কিন্তু আপেল বাগান? এখনও সেভাবে আপেলের বাগান দেখা হয়নি। যেতে যেতে রাস্তার পাশে দু’একটা আপেলের গাছ দেখানোর চেষ্টা করেছেন গাড়ির চালক। কিন্তু ঠিকমতো দেখতে পাওয়ার আগেই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে সেই সব গাছ। ভাইসরয় প্যালেস, আর্মি মিউজিয়াম আর বার্ড পার্ক ঘুরে গাড়িতে উঠতেই চালক বললেন, এবার আমাদের গন্তব্য মাশোবরা...। হিমালয়ান বার্ড পার্ক বা ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডি থেকে মাশোবরা ১৪ কিলোমিটার। হিন্দুস্তান-তিব্বত রোড ধরে গাড়িতে সময় লাগে আধ ঘণ্টার মতো। ১৮৫০ সালে রাস্তাটি তৈরি করেছিলেন লর্ড ডালহৌসি।


সিমলার প্রথম আপেল বাগান মাশোবরাতেই তৈরি করেছিলেন আলেক্সান্ডার স্কট। সেটা ১৮৮৭ সাল। সেই আপেল বাগানকে ঘিরেই পরে গড়ে উঠেছে The Regional Horticultural Research Station বা RHRS। আপেলের মতো বিশেষ তাপমাত্রায় ফলে এমন ফল, তাদের রোগ, রোগ নিরাময় নিয়ে শুরু হয় গবেষণা। ভারতে প্রথম। বিশাল আপেল বাগানের পাশাপাশি বর্তমানে মাশোবরায় রয়েছে আপেল গবেষণা কেন্দ্র, অসাধারণ সংগ্রহশালা। আপেলের গাছে কত রকম পোকা লাগতে পারে, বা কত রকম আপেল হতে পারে, মাশোবরায় না গেলে আপনার অজানা থেকে যাবে। পরিবার নিয়ে ঘোরার অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। চাইলে থাকতেও পারেন। মাশোবরায় রয়েছে ছোট, মাঝারি ও বড় মাপের বহু হোটেল ও কটেজ।
শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশ বা আপেল বাগানের জন্য নয়, মাশোবরা বিখ্যাত তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্যও। মকর সংক্রান্তির আগের দিন লোহরি থেকে শুরু করে নবরাত্রি, দীপাবলি, হোলি এখানে পালিত হয় সাড়ম্বরে।


পাহাড়ের মাথায় গল্ফগ্রিন...
পাহাড়ের মাথায় বিশ্বের সব থেকে বড় হনুমান মূর্তি দেখে বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়েছিলাম জাখু পাহাড়ে। কিন্তু জানা ছিল না, আরও বিস্মিত হওয়া বাকি। ফের বিস্মিত হওয়ার পালা নলদেহরায় গিয়ে। মাশোবরা থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে নলদেহরা। সমুদ্রতল থেকে উচ্চতা প্রায় ২ হাজার ৪৪ মিটার। এখানেই পাহাড়ের মাথায় রয়েছে গল্ফগ্রিন! লর্ড কার্জনের তৈরি গল্ফ কোর্স।
আমাদের গাড়ি যেখানে নামিয়ে দিল, সেখান থেকে ঘন দেবরারু ও ঝাউয়ের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটা রাস্তা চলে গিয়েছে পাহাড়ের ওপরে। কুফরির থেকেও রাস্তাটা খাড়াই। এখানেও পর্যটকের অপেক্ষায় অসংখ্য ঘোড়া। জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া।
তিনটি ঘোড়ায় আমরা চারজন। হেলতে দুলতে চললাম পাহাড়ের মাথার দিকে। চারপাশের সবুজ জঙ্গল চোখ জুড়িয়ে দেয়। কুফরির মতো এখানে এতটা ভিড় নেই। তাই ঘোড়ার খুরের শব্দ ছাড়া কানে আসে ঝাউ পাতার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের শব্দ। আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম পাহাড়ের মাথায়। ঘোড়া থেকে নামতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। সামনে আসাধারণ হিমালয় পর্বতমালা। এই শীতেও গাড় সবুজ গল্ফকোর্স, ঘন জঙ্গল। চাইলে পাহাড়ের ওপরেও ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে পারেন জঙ্গলের মধ্যে। শুনেছি, নলদেহরা থেকে সূর্যাস্ত নাকি অসাধারণ দেখায়। কিন্তু ততক্ষণ অপেক্ষা করার উপায় ছিল না আমাদের।

নলদেহরা থেকে আমাদের হোটেল উইংগেট ইন প্রায় ২৬ কিলোমিটার। ১৩ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরে ফিরতে ঘণ্টাখানেক লাগল। ফিরতে ফিরতেই জমল মন খারাপের মেঘ। কারণ, কালই ছেড়ে যেতে হবে সিমলাকে।

আরও পড়ুন -
১. ‘শিবালিক’-এ সূর্যোদয়: হিমালয়ের কোল বেয়ে খেলনা ট্রেনে কালকা থেকে সিমলা
২. ‘সিমলার ডায়েরি (প্রথম দিন): মল রোড, দ্য রিজ, লোয়ার বাজার, গর্টন ক্যাসেল, স্টেট মিউজিয়াম’
৩. সিমলার ডায়েরি (দ্বিতীয় দিন): অভয়ারণ্যে কৃষ্ণসার... কুফরির ঘোড়া.... বিশ্বের দীর্ঘতম হনুমান মূর্তি!

কীভাবে যাবেন -
কীভাবে কখন যাবেন, এই সাইটে আগের লেখাতেই বলেছি।

কোথায় থাকবেন -
সিমলায় সব থেকে ভাল থাকার জায়গা হল মল রোড। কারণ, এখান থেকে যে কোনও জায়গায় যাওয়া সুবিধাজনক। তাই, মল রোডে গিয়ে নিজের পছন্দ মতো একটা হোটেল খুঁজে নিয়ে উঠে পড়ুন। ৭৫০ টাকা থেকে হোটেলের ঘরভাড়া শুরু। পিক সিজন হলে ভাড়া একটু বেশি হতে পারে। মোটামুটি ১০০০ টাকা বাজেট হলে ভাল হোটেলই মিলবে। যাওয়ার আগে একটু ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে নিলে সুবিধা হবে। চাইলে অনলাইন বুকিংও করে নিতে পারেন। যদি পারেন কালীবাড়ি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এখানকার যাত্রীনিবাসে থাকার জায়গা পেলে থাকা-খাওয়ার খরচ অন্য যে কোনও জায়গার থেকে কম হবে। থাকার জায়গা হিসেবে পছন্দ না হলে, এখানে খেয়ে অন্য জায়গায় থাকতে পারেন।

যোগাযোগ -
2H, 2nd floor, Electronic Center,
1-1 A, Biplabi Anukul Chandra Street,
Kolkata - 700072
Contact No. :033-22126361(P) 0000000000(M) 033-22127470
Email-Id: kolkata@hptdc.in

M/s Himachal Pradesh Helpline Tourism , E-Mall, Shop No.104, First Floor, 6 Chitranjan Avenue,  Kolkata-72
Tel: (033) 22124007/6 Toll Free No: 18001808082
E-mail: helpline_tourism@yahoo.co.in
Website: www.himachalhelplinetourism.com