সোলাং ভ্যালির স্থানীয় নাম, ‘সোলাং নালা’। আর একটি নাম ‘স্নো পয়েন্ট’। ‘সোলাং’ শব্দের অর্থ কাছাকাছির কোনও গ্রাম। ‘সোলাং নালা’র মানে, বয়ে চলা নালার কাছাকাছি গ্রাম। সোলাং গ্রাম ও বিয়াস কুণ্ডর মাঝে সোলাং ভ্যালি। বর্ষায় বা শরতে সবুজ সোলাং। শীতে বরফ-সাদা। কিন্তু এবার ডিসেম্বরেও মানালিতে বরফ নেই। কিন্তু তাও সে সুন্দর, অনবদ্য। চারপাশে উঁচু পাহাড়... মাঝে উপত্যকা। পাহাড়ের গায়ে পাইন, চেস্ট নাট আর স্প্রুস গাছের সারি। মাথার ওপর নীল আকাশ। পেঁজা তুলোদের সঙ্গে ভেসে বেড়ানো রংবেরঙের গ্লাইডার।
শীতের সোলাং অন্য রকম। শীতে এখানে জমে ওঠে উইন্টার স্পোর্টস। প্যারাগ্লাইডিং, প্যারাশুটিং, স্নো স্কুটার, জর্বিং, স্কিয়িং, কেবল কার, রোপ ওয়ে, হর্স রাইডিং, মিনি খোলা জিপ - কী নেই! শীতের শেষে যখন বসন্ত আসে, তখন গলতে শুরু করে বরফ। আর তখন স্কিয়িং-এর জায়গা নেয় জর্বিং। একটি রবারের বলের মধ্যে ২ জন। ২০০ থেকে ২৫০ মিটার ওপর থেকে গড়িয়ে দেওয়া হয় বরফ ঢাকা ঢালে। স্কিয়িং-এর সেরা সময় জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। জর্বিং মে থেকে নভেম্বর। বর্ষা ছাড়া সারা বছরই করতে পারবেন প্যারাগ্লাইডিং। অগাস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে গেলে কেবল কারে করে পাহাড়ের মাথায় অবশ্যই চড়বেন। পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে দেখা উপত্যকার প্যানোরামিক ভিউ আর ধৌলাধার পর্বতশ্রেণি কোনও দিন ভুলতে পারবেন না।
সোলাং ভ্যালির অন্যতম আকর্ষণ বরফের শিবলিঙ্গ। স্থানীয় মানুষের দাবি, বরফের এই শিবলিঙ্গ আবিষ্কৃত হয় ১৪ বছর আগে। আবিষ্কার করেছিলেন বাবা প্রকাশ পুরী নামে এক সাধু। পরে শিবলিঙ্গটিকে ঘিরে একটি ছোট মন্দির ও আশ্রম তৈরি করেন তিনি। প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে বিশাল সংখ্যক পর্যটক আসে সোলাং ভ্যালিতে, বিশেষ করে প্রকৃতির এই অদ্ভূত সৃষ্টিকর্ম দেখতে। রুক্ষ পাথরের শতাধিক সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতেই সামনে ‘আইস শিবলিঙ্গম’! শীতের সময় বরফ জমে কখনও কখনও শিবলিঙ্গের উচ্চতা দাঁড়ায় ২০ ফুট। এবার অবশ্য ততটা উঁচু হয়নি। পিছনের বিশাল উঁচু পাহাড়ের মাথা থেকে শিবলিঙ্গের ওপর আছড়ে পড়ছে ঝরনার জল। যেন প্রকৃতিই অভিষেক করছে দেবাদিদেব মহাদেবের। সামনের আশ্রম থেকে ভেসে আসছে মন্ত্রোচ্চারণ! অদ্ভূত পরিবেশ!
সোলাং সফরের সেরা সময় -
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি
কীভাবে যাবেন -
কলকাতা থেকে বিমানে দিল্লি বা চণ্ডীগড়। সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে মানালি। কলকাতা থেকে ট্রেনে কালকা হয়েও যেতে পারেন। কালকা থেকে মানালি সরাসরি গাড়ি পাবেন। সিমলা দেখা না হয়ে থাকলে কালকা থেকে টয় ট্রেনে সিমলা। সিমলা থেকে গাড়িতে মানালি। চাইলে সিমলা থেকে বাসেও মানালি যেতে পারেন। কিন্তু বাসে গেলে একটা সমস্যা। মানালি যাওয়ার পথে কুলু, মাণ্ডি, রাফটিং পয়েন্ট, প্যাণ্ডো ড্যাম, সুন্দরনগর লেক, গুরুদ্বারের মতো জায়গায় বাস থামবে না। গাড়িতে গেলে এইসব জায়গাগুলো দেখা যাবে।
কোথায় থাকবেন -
সোলাং-এ হোটেল হাতে গোণা। তাই সবাই মানালিতে থেকে সোলাং ভ্যালি বা রোটাং পাস ঘুরে আসেন। তবে থাকতে চাইলে পাবেন হোটেল বা রিসর্ট।
আগে যা লিখেছি -
মানালির পথে-৪: ঘোড়ার পিঠে ‘অ্যাডভেঞ্চার ভ্যালি’র খোঁজে
মানালির পথে-৩: বিপজ্জনক সুড়ঙ্গের অন্ধকারে ভয়ঙ্কর সুন্দর ৪ মিনিট!!
মানালির পথে-২: তারপর যে-তে যে-তে যে-তে, এক নদীর সঙ্গে দেখা...
সিমলা থেকে ভারতের সুইজারল্যান্ড-এর পথে
সিমলার ডায়েরি (তৃতীয় দিন): ভাইসরিগ্যাল লজ... মাশোবরার আপেল বাগান... পাহাড়ের মাথায় গল্ফগ্রিন...!
সিমলার ডায়েরি (দ্বিতীয় দিন): অভয়ারণ্যে কৃষ্ণসার... কুফরির ঘোড়া.... বিশ্বের দীর্ঘতম হনুমান মূর্তি!
সিমলার ডায়েরি (প্রথম দিন): মল রোড, দ্য রিজ, লোয়ার বাজার, গর্টন ক্যাসেল, স্টেট মিউজিয়াম
‘শিবালিক’-এ সূর্যোদয়: হিমালয়ের কোল বেয়ে খেলনা ট্রেনে কালকা থেকে সিমলা