কলকাতা: এতদিন লড়াইটা চলছিল সোশাল মিডিয়ায়। এবার সনিকার মৃত্যুর বিচার চেয়ে পথে নামলেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। আঙুল তুললেন বিক্রমের দিকে। থানার সামনে জ্বালালেন মোমবাতি।
গাড়ি দুর্ঘটনায় মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় দাবি করছেন, তিনি মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন না! অথচ ঘটনার দিন রাতে পার্টিতে উপস্থিত, সনিকার একাধিক বান্ধবীর দাবি, সেদিন বিক্রম মত্ত অবস্থায় ছিলেন! তাঁদের আদরের সোনুর চিরবিদায় হয়ে গেল তা এখনও মানতে পারছেন না সোনিকার বন্ধুরা।
ফেসবুকে ‘জাস্টিস ফর সোনিকা’ নামে একটি পেজ খোলা হয়েছে। তাতে একাধিক লেখা এবং ছবি আপলোড করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে দাবি করছেন, বিক্রম অসত্য বলছেন। ফেসবুকে কারোর আবার দাবি, তিনি নিজে চোখে সেদিন বিক্রমকে মদ্যপান করতে দেখেছেন!
বিক্রম দাবি করছেন, তিনি সেদিন মত্ত অবস্থায় ছিলেন না! কিন্তু, তাঁর বান্ধবীরা সেদিনের পার্টির এই ছবি প্রকাশ্যে এনেছেন। ফেসবুকে কেউ কেউ বিক্রমের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলছেন, ফুটেজ কি কখনও মিথ্যা হতে পারে? এদিন সোনিকার মৃত্যুর বিচারের দাবিতে টালিগঞ্জ থানার সামনে মোমবাতি মিছিল করেন মৃত মডেলের পরিজনরা। এ দিন সনিকার পরিজনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ও। সনিকার বন্ধুদের দাবিকে সমর্থন করেছে কংগ্রেসও।
৫ মে আত্মসমপর্ণের পর জামিন পেয়ে গিয়েছেন বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সনিকার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীরা। একজনের মতে, কেউ যদি এইভাবে বেরিয়ে যায়, যে কারও সঙ্গে হতে পারে। আমার সঙ্গেও হতে পারে। এত সহজে জামিন পেয়ে গেল। আশা করি পুলিশ-প্রশাসন ভুল শোধরাবে। সত্যিটা উঠে আসবে।
যদিও পুলিশের বক্তব্য, তদন্ত চলছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। কী ঘটেছিল জানার জন্য বিক্রমকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। পার্টিতে উপস্থিত কয়েকজনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, যে ১২ থেকে ১৫ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন একজন অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সি চালক এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। পুলিশ সূত্রে আরও দাবি, দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে থাকাকালীন বিক্রম প্রথমে জানান, সিটবেল্ট বাঁধা ছিল। যদিও পরে তিনি দাবি করেন, এ ব্যাপারে তাঁর কিছু মনে নেই!
পুলিশ সূত্রে দাবি, দুর্ঘটনার সময় বিক্রমের জুতো ও মোজাও খোলা ছিল! সেই সময় বিক্রম যে পোশাক পরেছিলেন, তা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এদিকে, পুলিশ সূত্রে দাবি, ফরেন্সিকের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিক্রমের গাড়িটি আগেও একবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। সেই সময় এয়ার ব্যাগ বেরিয়ে এসেছিল।
কিন্তু এক্ষেত্রে কেন তা খুলল না? পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমবার দুর্ঘটনার পর, ফের এয়ার ব্যাগ লাগানো হয়েছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
বৃহস্পতিবারের মধ্যে টালিগঞ্জ থানায় বিক্রমের হাজিরা দেওয়ার কথা। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, বুধবার থানায় যেতে পারেন অভিনেতা।
মাত্র আটাশ বছর বয়সেই সনিকার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তাঁর বন্ধু-পরিচিতরা! শেষকৃত্যে সোনিকার স্মৃতিতে আয়োজিত প্রার্থনাসভাতেও তাই ছিল শোকের ছায়া! অনেকে বুঝেই উঠতে পারছেন না কী বলবেন? কীভাবে নিজেকে সামলাবেন? ডেরেক ও’ব্রায়েন থেকে সনিয়ার বন্ধু সাহেব-- স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে সনিকার প্রাণবন্ত স্বভাবের কথা। খুব ছোট ছোট বিষয়ে আনন্দিত হওয়ার কথা। লুচি খেতে চাওয়ার কথা। আবার গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার কথা।
প্রার্থনাসভায় আমন্ত্রিতদের হাতে, তুলে দেওয়া হয়েছিল সনিকার স্মৃতিসম্বলিত বুকলেট। যেখানে তাঁর মা-বাবার বার্তাও ছিল। যার শেষটা হয়েছিল এই বাক্যটা দিয়ে। সোনু, যতদিন না আমাদের আবার দেখা হয়, ততদিন বিদায়। আর সনিকার বান্ধবীরা চাইছেন, তাঁর হয়ে লড়ে যেতে। যতদিন না সুবিচার মেলে।