কলকাতা: ভারতের পশ্চিম জলসীমান্তে নজরদারি বাড়াতে এবার নৌসেনার নতুন হাতিয়ার হতে চলেছে ‘তিলাঞ্চাং’। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই জাহাজকে বুধবার নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হল।


ওয়াটার জেট ফাস্ট অ্যাটাক ক্র্যাফট (ডব্লুজেএফএসি) গোত্রের এই জাহাজটি তৈরি করেছে কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)।


২৬/১১ মুম্বই হামলার পর পাক সীমান্ত লাগোয়া ভারতের পশ্চিম জলসীমাকে আরও নিশ্ছিদ্র করতে প্রচুর সংখ্যক জাহাজ মোতায়েন করেছে নৌসেনা। তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপকূলের নিরাপত্তা দিচ্ছে উপকূলরক্ষী বাহিনী।


যদিও, বাংলায় প্রবাদ আছে, সাবধানের মার নেই! তাই, নিরাপত্তাকে আরও আঁটোসাঁটো করতে এই বিশেষ ধরনের জলযানের প্রয়োজন এবং গুরুত্ব অপরিসীম।



কী আছে এই জাহাজে? জিআরএসই-র তরফে জানানো হয়েছে, নামেই স্পষ্ট, ফাস্ট অ্যাটাক ক্র্যাফটগুলির গতি অত্যন্ত ক্ষীপ্র। ফলে, ভারতের জলসীমায় শত্রুপক্ষের কোনও ছোট জাহাজ বা দ্রুতগতির জলযান ঢুকে পড়লে, প্রথমে তাকে ধাওয়া করবে ‘তিলাঞ্চাং’।


অনেক ক্ষেত্রে, বড় আকারের জাহাজের গতি স্লথ হওয়ায় শত্রুপক্ষের ছোট ছোট জাহাজ বা জলযানগুলি ফাঁকতালে বেরিয়ে যায়। গতিতে ধাওয়া করা সম্ভব হয় না।


কিন্তু, ‘তিলাঞ্চাং’-এর মতো ভেসেলগুলি এই কাজে বিশেষভাবে পারদর্শী। প্রোপালশন-জেট ইঞ্জিন নির্ভর এই জাহাজের সর্বোচ্চ গতি ৩৫ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার)। ফলে, কোনও শত্রু-জাহাজ এর সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে না, বলে দাবি করেন তিনি।


এদিন জাহাজের কম্যান্ডিং অফিসার (সিও) নৌসেনার কম্যান্ডার অদিত পট্টনায়েক জিআরএসই সিএমডি রিয়ার অ্যাডমিরাল (অবসরপ্রাপ্ত) এ কে ভার্মার থেকে দায়িত্ব তুলে নেন।


পট্টনায়েক জানান, ‘সিআরএন-৯১’ ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাহাজে রয়েছে ৩০ এমএম গান। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক সেন্সর। মূলত, সন্ত্রাস মোকাবিলায় উপকূল নজরদারিতে এই জাহাজ ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি, জলদস্যু হানা থেকে শুরু করে পাচার—সবকিছুর ওপর নজর রাখবে ‘তিলাঞ্চাং’।



অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌসেনার পশ্চিমাঞ্চল কম্যান্ডের চিফ স্টাফ অফিসার (টেকনিক্যাল) রিয়ার অ্যাডমিরাল সন্দীপ নৈথানি। মুম্বই হামলার পর কতটা সুরক্ষিত পশ্চিম উপকূল? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হয়েছে।


জিআরএসই-র অধিকর্তা এ কে ভার্মা জানান, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপের নামানুসারে জাহাজের নাম রাখা হয়েছে ‘তিলাঞ্চাং’। এর আগে গত বছর এই গোত্রের আরও দুটি জাহাজ নৌসেনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলি ছিল ‘আইএনএস তারমুগলি’ এবং ‘আইএনএস তিহায়ু’। তবে, সংস্থার দাবি, আগেরগুলির চেয়ে ‘তিলাঞ্চাং’ অনেক বেশি আধুনিক।


এই জাহাজের ওজন প্রায় ৩১৫ টন। একবারে ২ হাজার নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রে থাকতে পারে। এই জাহাজে অফিসার ও নাবিক মিলিয়ে প্রায় ২৯ জনের থাকার সংস্থান রয়েছে। জাহাজটি থাকবে কর্নাটকের কারওয়াড়ে।


এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এদিনের ধরে মোট ৯৯টা জাহাজ নৌসেনা বা উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দিল জিআরএসই। ভার্মা জানান, তাঁদের হাতে এখনও আরও ১৯টি জাহাজ তৈরির বরাত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘প্রোজেক্ট ১৭এ’-র  আওতায় ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি অ্যাডভান্সড স্টেলথ ফ্রিগেট নির্মাণের। আগামী ২০১৮ সালে তার কাজ শুরু হবে।