রাজর্ষি দত্তগুপ্ত, কলকাতা: সোনার দাম লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী। প্রায় টানা সাত দিন কার্যত দফায় দফায় দাম বেড়ে সোমবার ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৪৪ হাজারেরও সীমা পার করে গিয়েছে। যদিও, মঙ্গলবার দাম বৃদ্ধির সূচকে মিলেছে কিছুটা স্বস্তির ইঙ্গিত। তবে এই স্বস্তি কি সাময়িক? নাকি ওঠা-নামা বন্ধ করে সোনার দাম এর সূচক কোথাও গিয়ে স্থায়ী হতে চলেছে! আদতে বঙ্গবাসীর বিবাহ হোক কিংবা বিবাহ বার্ষিকী, উপনয়ন হোক বা অন্নপ্রাশন, সবেতেই স্বর্ণালঙ্কারের নিবিড় যোগাযোগ এবং সোনা উপহার পাওয়া বা দেওয়া দুটিকে শুভ বলে মনেও করা হয়। শুধু বাঙালিরাই নয়, বঙ্গবাসী অবাঙালিরাও ধনতেরাস কিংবা দিওয়ালিতে প্রায় প্রথামাফিক স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে ভিড় জমান। এছাড়াও বড় বাজারের সোনাপট্টি থেকে সোনা কিনতে ভিন রাজ্যের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা নিয়মিত কলকাতা যাতায়াত করেন। তাই স্বর্ণ সূচকে দামের ওঠাপড়া স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব ফেলেছে কলকাতার সোনা বাজারে।
মঙ্গলবার কলকাতায় ২৪ ক্যারেট সোনার প্রতি দশ গ্রামের মূল্য ছিল ৪৩ হাজার ৬৭০ টাকা, যা গতকাল ছিল ৪৩ হাজার ৭৩০ টাকা। অন্যদিকে, অলংকার তৈরীর জন্য ব্যবহৃত ২২ ক্যারেট সোনার দাম ও কমেছে কিছুটা। প্রতি ১০ গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনার মঙ্গলবার মূল্য ছিল ৪১ হাজার ৮৭০ টাকা কিন্তু গতকাল ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি দশ গ্রামের মূল্য ছিল কলকাতায় ৪২ হাজার ২৫০ টাকা। এই ওঠাপড়া সামগ্রিকভাবে বাজারের চাহিদা কমেছে বেশ। সোনার দোকানে ভিড়ও কমেছে অনেকটাই। বড় বাজার সোনাপট্টির দীর্ঘদিনের স্বর্ণ ব্যবসায়ী এস অগ্রবাল বলছেন, " বাজার বেশ খারাপ। আসলেই ক্রেতারা এই দামের ওঠা পড়াতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। বিক্রেতারাও বিপাকে। আমরা অপেক্ষা করছি বাজার কবে স্থিতিশীল হবে তার জন্য।" সোনার দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদার ঘাটতিতে স্বর্ণলঙ্কার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরাও বিপাকে পড়েছেন। কারণ মালিকদের পক্ষে রোজকার মজুরি দেওয়া রীতিমতো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে এত কিছুর মধ্যেও আশার আলো দেখছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একাংশ। স্বর্ণালংকার শিল্প এবং ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমর কুমার দে এর মতে, "এই সময় কালকে আমরা বলি সংশোধন পর্ব। এই যে দাম বাড়ছে তা হয়তো সর্বোচ্চ 45 হাজার এও পৌঁছতে পারে। একদিকে এই দাম বৃদ্ধির ফলে বিভ্রান্ত হয়ে কিংবা আর্থিক অক্ষমতার কারণে খুচরো গ্রাহক স্বর্ণালংকার কিনতে পারবেন না ঠিকই কিন্তু অন্যদিকে যাঁরা বিনিয়োগের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করেন, তাঁরা এতে উৎসাহিত হবেন এবং সোনার বিক্রি বাড়বে। মনে রাখতে হবে বাংলায় চিরদিনই সোনা কেনা হয়ে থাকে সঞ্চয়ের মানসিকতা থেকে। মূলত মহিলারাই সঞ্চিত অর্থ দিয়ে সোনা কিনে থাকেন। তাই স্বর্ণালঙ্কার কে স্ত্রীধন বলা হয়ে থাকে। তাই সঞ্চয় এর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিনিয়োগে অতিরিক্ত লাভ পাওয়ার প্রেক্ষিত থেকে সোনার দাম বৃদ্ধি হলেও বিক্রি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ দাম বৃদ্ধি সোনার অ্যাপ্রিসিয়েশন ভ্যালু অর্থাৎ সোনাতে বিনিয়োগে ভবিষ্যতে লাভ হবে কারণ দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকছে, এই ধারণা বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে।" সবমিলিয়ে বলা যেতে পারে, লাগাতার সোনার দাম বৃদ্ধি কখনো বা দামের ওঠা-নামার ফলে আশা-নিরাশার দোলায় দুলছে কলকাতা তথা বাংলার সোনার বাজার।