সন্দীপ সরকার,কলকাতা: কোথাও চিকিৎসার নামে প্রতারণা, কোথাও বেড থাকা সত্ত্বেও রোগীকে ভর্তি না নেওয়া, কোথাও বাড়তি বিলের অভিযোগ। কলকাতা ও জেলার ৭টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে মোটা টাকা জরিমানা করল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা হল পুলিশি তদন্তের সুপারিশও।
সন্তান প্রসবের জন্য রিপন স্ট্রিটের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন অন্তঃসত্ত্বা সুলতানা খাতুন। সিজার করা হয় তাঁর। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরেও বন্ধ হয়নি রক্তক্ষরণ। নার্সিংহোমে আরও দু'দফা অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর। এরপরেই কোমায় চলে যান ওই প্রসূতি। কলকাতার আরও দুটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় প্রসূতিকে। স্ত্রী-র চিকিৎসায় নিজের বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হন স্বামী। মোট ১২ লক্ষ টাকা খরচ হয়। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ চালাতে না পেরে শেষমেশ স্ত্রীকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বামী। এখন এসএসকেএম-এ চিকিৎসাধীন সুলতানা খাতুন। নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে সুলতানার পরিবার। তদন্তে নেমে স্বাস্থ্য কমিশন দেখতে পায়, যে নার্সিংহোমে ওই অন্তঃসত্ত্বার অস্ত্রোপচার হয়েছিল, সেই নার্সিংহোমের কর্ণধার নিজেই অস্ত্রোপচার করেছিলেন। তিনি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নন, তিনি এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসক মাত্র। সোমবার শুনানির পর নার্সিংহোমকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন ।
এদিন কমিশনে আরেকটি মামলায় সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কসবার বাসিন্দা অমিতাভ সাহা নামে এক ব্যক্তির পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হয়, বেড খালি থাকা সত্ত্বেও করোনা আক্রান্তকে ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল ওই হাসপাতাল। তদন্তে নেমে গত বছরের ২২ নভেম্বর রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালের করোনা বেড স্ট্যাটাসের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ ওই দিন ওই হাসপাতালে দুটি কোভিড বেড খালি ছিল। তা সত্ত্বেও রোগীকে ভর্তি না নিয়ে রেফার করা হয়। আমরা তিন লক্ষ টাকা জরিমানা করলাম।’’
চুল প্রতিস্থাপনের নামে অভিনব কায়দায় একটি অভিযোগ জমা হয়েছিল কমিশনে। অভিযোগকারী শ্যামল কুমার রায় নামে, বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ রিচ ফিল্ড হেলথ অ্যান্ড বিউটি নামে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টারে গিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, তাদের তরফে বলা হয় ট্রান্সপ্লান্টের জন্য ৪৪ হাজার টাকা লাগবে। সেই টাকা নগদে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বেসরকারি ঋণদানকারী সংস্থা থেকে লোন নেওয়ার সুবিধা রয়েছে। এগারো মাস ইএমআই দিতে হবে। ওই ব্যক্তির থেকে ১১টি পোস্ট ডেটেড চেক নেওয়া হয়। ওই ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পরপর দু'বার ইএমআই বাবদ টাকা কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু করা হয়নি হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট। অভিযুক্ত সংস্থাটির অফিস সল্টলেকে। বিধাননগর পুলিশকে ঘটনাটির তদন্তে সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য কমিশন।
পাশাপাশি আরও চারটি মামলায় কলকাতা ও জেলার চারটি বেসরকারি হাসপাতালকে টাকা ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন।