নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে গিয়ে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠছে। Operation Sindoor নিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন শিবকুমারের মন্তব্য ঘিরে এবার বিতর্ক চরমে উঠল। তিনি জানিয়েছেন, Operation Sindoor চলাকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের বাধাদানের কারণেই ভারতকে যুদ্ধবিমান হারাতে হয়। আর তাঁর সেই মন্তব্য সামনে আসতেই নতুন করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। (India-Pakistan Conflict)
গত মাসে ইন্দোনেশিয়ায় একটি সেমিনারে যোগ দেন ক্যাপ্টেন শিবকুমার। সেখানে ৩৫ মিনিটের একটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন তিনি, যাতে Operation Sindoor নিয়ে ভারতের কৌশল তুলে ধরেন। জানান, ভারত অনেক যুদ্ধবিমান হারিয়েছে বলে ইন্দোনেশিয়ার একজন বক্তা দাবি করেছেন। সেই দাবির সঙ্গে একমত না হলেও, ভারত কিছু যুদ্ধবিমান হারিয়েছে বলে মেনে নেন ক্যাপ্টেন শিবকুমার। (Operation Sindoor)
সেমিনারে বক্তৃতা করার সময় ক্যাপ্টেন শিবকুমারকে বলতে শোনা যায়, "ভারত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে Operation Sindoor চলবে। পাকিস্তান যুদ্ধবিরতে চেয়ে আবেদন জানায়। ভারত শত্রুতা-বিরতিতে রাজি হয়। আমরা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হইনি, আমরা শত্রুতা-বিরতিতে রাজি হয়েছি। ফের উস্কানি দিলে, প্রত্যাঘাত করা হবে।"
ওই বক্তৃতার যে ভিডিও সামনে এসেছে, তার ঠিক ৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে ক্যাপ্টেন শিবকুমার বলেন, "নয়াদিল্লি অভিমুখে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, যা S-400 ধরে নেয়। এর ছাড়াও ড্রোন, UAV গুলি করে নামানো হয়। ভারত অনেকগুলো যুদ্ধবিমান হারিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। আমি সেই দাবির সঙ্গে একমত নই, তবে হ্যাঁ আমরা কিছু যুদ্ধবিমান হারিয়েছি। তবে তা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বাধাদানের কারণে। কারণ পাকিস্তানের সামরিক এবং আকাশ প্রতিরক্ষা পরিকাঠামোয় আঘাত হানতে নিষেধ করা হয়েছিল আমাদের। কিন্তু ক্ষতি হওয়ার (যুদ্ধবিমান হারানোর) পর আমরা কৌশল বদলে ফেলি। সামরিক পরিকাঠামোয় আঘাত হানি সরাসরি। ওদের আকাশ প্রতিরক্ষায় আঘাত হানা হয়। তাই আমাদের হামলা চালাতে সুবিধা হয়। ভূমি থেকে ভূমিতে, ভূমি থেকে আকাশে আঘাত হানতে ব্রহ্মোস ছুড়তে সক্ষম হই।"
ক্যাপ্টেন শিবকুমারের এই মন্তব্য সামনে আসতেই জাতীয় রাজনীতি তপ্ত হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়, '৭ মে রাতে ভারতীয় বায়ুসেনা যুদ্ধবিমান হারায় রাজনৈতিক বাধার কারণে। গতমাসে ইন্দোনেশিয়ার সেমিনারে ক্যাপ্টেন শিবকুমার একথা বলেছেন। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহানও অপারেশন সিঁদুরে যুদ্ধবিমান হারানোর কথা মেনে নেন। অসময়ে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা, বিশেষ করে ভারত যেখানে শক্তিতে এগিয়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এর উত্তর দিতেই হবে'।
কংগ্রেসের তরফে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে, যেমন-১) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অপারেশন সিঁদুরের সত্যতা নিয়ে কেন সর্বদল বৈঠক ডাকছেন না?
২) সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রস্তাব কেন খারিজ করে দেওয়া হল?
৩) গোটা দেশের কাছ থেকে কী লুকোচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর?
এর আগে, CDS অনিল চৌহান সিঙ্গাপুরে গিয়ে Operation Sindoor-এ যুদ্ধবিমান হারানোর কথা মেনে নিয়েছিলেন। পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান নামানোর দাবি করেছে। সেই দাবি সত্য নয় বলে জানালেও, আসল সংখ্যা প্রকাশ করেননি CDS চৌহান। তবে এই প্রথম সরকারের কোনও প্রতিনিধি রাজনৈতিক বাধার কথা বললেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হতে শুরু করেছে।
যদিও ইন্দোনেশিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, 'সেমিনারে Defence Attache-র মন্তব্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কিছু রিপোর্ট দেখলাম। ওঁর মন্তব্য খাপছাড়া ভাবে তুলে, বিকৃত করে দেখানো হয়েছে। অন্য প্রতিবেশী দেশগুলির মতোই ভারত রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে কাজ করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। সেকথাই তুলে ধরা হয়। পরিষ্কার বলাও হয়েছে যে, সন্ত্রাসী পরিকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্যেই Operation Sindoor চালানো হয়। সংঘাত বাড়ানোর লক্ষ্য ছিল না'। তবে গোটা ঘটনায় বিতর্ক থামছে না। এর আগে, জয়শঙ্করের একটি মন্তব্য় নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হয়। তিনি জানিয়েছিলেন, সামরিক অভিযানের আগে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল। অভিযানের আগে কেন জানিয়ে দেওয়া হল পাকিস্তানকে? তার জন্যই কি ভারতকে যুদ্ধবিমান হারাতে হল? প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা।