তিরুঅনন্তপুরম: মাঝ সাগরে জাহাজ উল্টে বিপত্তি। উচ্চ সতর্কতা জারি হল কেরল উপকূলে। জাহাজে বোঝাই কন্টেনারে ডিজেল, ক্যালসিয়াম কার্বাইড বোঝাই ছিল। সেই সব জলে মিশলে মারাত্মক বিপদ ঘটতে পারে, সাগরের জল বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে এবং তা থেকে সাগরের বাস্তুতন্ত্রে ঘোর বিপদ নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেরল উপকূলের কাছে লিবেরিয়ার পতাকা লাগানো, MSC ELSA 3 জাহাজটি ডুবে গিয়েছে। দুর্ঘটনার সময় কোচি থেকে জাহাজটির দূরত্ব ছিল মোটে ৩৮ নটিক্যাল মাইল। আর তার জেরেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কেরল উপকূলে এই মুহূর্তে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, মালবাহী ওই জাহাজটিতে ৮৪.৪৪ মেট্রিক টন ডিজেল, ৩৬৭.১ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েলের পাশাপাশি, ৬৪০টি কন্টেনারে আরও নানা পদার্থ ছিল। ১২টি কন্টেনারে ছিল ক্যালসিয়াম কার্বাইড। দুর্ঘটনার পর জাহাজের ২৪ জন কর্মীকে উদ্ধার করে ভারতের উপকূল বাহিনী। কিন্তু সাগরের জলে তেল ও রাসায়নিক মিশলে কী বিপদ হতে পারে, সেই নিয়ে এই মুহূর্তে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ভারতীয় উপকূল বাহিনীর দূষণ নিয়ন্ত্রক শাখার জাহাজ ‘সক্ষম’ এই মুহূর্তে কাজে নেমে পড়েছে। কতটা জায়গা জুড়ে তেল ছড়িয়ে থাকতে পারে, হেলিকপ্টার উড়িয়ে, উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে তার মানচিত্র তৈরির চেষ্টা চলছে। কেরলের রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করেছে সাধারণ মানুষের জন্য। উপকূলে ভেসে আসা কন্টেনার বা কোনও পদার্থ ছুঁতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সকলকে।
রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, মেরিন গ্যাস অয়েল এবং সালফার যুক্ত জ্বালানির তেল সাগরের জলে মেশার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পরিবেশগত ভাবে স্পর্শকাতর, পর্যটক সমৃদ্ধ উপকূলের উপর প্রভাব পড়তে পারে। তবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড জলে মিশলে কী হবে, সেই নিয়ে চিন্তিত পরিবেশবিদরা। ক্যালসিয়াম কার্বাইড একটি রংহীন কঠিন পদার্থ। ক্যালসিয়াম অক্সাইড এবং কার্বনকে ২০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম করে তৈরি হয়। রাসায়নিক কারখানায় এই ক্যালসিয়াম কার্বাইড কাজে লাগে।
কিন্তু ক্যালসিয়াম কার্বাইড জলের সংস্পর্শে এলে বিক্রিয়া ঘটে, যা থেকে acetylene গ্যাস ও ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড উৎপন্ন হয়। acetylene গ্যাস তৈরির সময় তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি থাকে। গ্যাসটি অতি দাহ্যও হয়। পাশাপাশি, জলে অ্যালক্যালাইনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড। এর ফলে জলে pH-এর ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন এবং বংশবিস্তার বিপন্ন করে তোলে। পাশাপাশি, জলের গুণমানও নষ্ট হয়।
এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং রাজ্য প্রশাসনও তৎপর রয়েছে। মৎস্যজীবী ও উপকূলবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে যেমন, কোনও কন্টেনার বা জলে তেলের উপস্থিতি চোখে পড়লে জানাতে বলা হয়েছে সত্বর।