কলকাতা: টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) সাংসদ পদ বাতিলের খসড়া রিপোর্টে সিলমোহর দিল সংসদের নীতি কমিটি। মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের পক্ষে ভোট দিলেন ছ'জন সাংসদ। মহুয়াকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন চার জন। বৃহস্পতিবার নীতি কমিটির বৈঠকে খসড়া রিপোর্টে সিলমোহর পড়ল। (Cash for Query Allegations)
বুধবারই ওই খসড়া রিপোর্টের বিষয়টি সামনে এসেছিল। বুধবার তাতে সিলমোহর পড়ল সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে। এবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে ওই সুপারিশপত্র পাঠানো হবে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে সুপারিশটি নিয়ে আলোচনা এবং ভোটাভুটি হবে। তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুমোদন থাকলে, সাংসদপদ বাতিল হয়ে যেতে পারে মহুয়ার।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নীতি কমিটির চেয়ারম্যান বিনোদ সোনকর বলেন, "মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে একটি খসড়া রিপোর্ট তৈরি করেছে নীতি কমিটি। আজকের বৈঠকে খসড়া প্রস্তুত করা হয়। ছয় সদস্য তাতে সমর্থন জানান, বিরোধিতা করেন চার সাংসদ। বিশদ রিপোর্ট আগামী কাল স্পিকারের কাছে জমা দেওয়া হবে। এর পর যা পদক্ষেপ করা প্রয়োজন, স্পিকার করবেন।"
যদিও নীতি কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদ, তথা নীতি কমিটির সদস্য দানিশ আলি। তিনি বলেন, "রিপোর্টটা গোটা পড়া হয়নি এখনও পর্যন্ত। কিন্তু দেশে দু'রকমের আইন চলতে পারে না। লাগাতার ধারা ২৭৫ নলঙ্ঘন করে চলেছেন নীতি কমিটির চেয়ারপার্সন। আমরা শুধু একটাই কথা বলতে পারি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছি, আগামী দিনেও তাই করব। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।"
তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে যদিও আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মহুয়া। নীতি কমিটির সামনে হাজিরা দেওয়ার আগে এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে জানান, আদানি এবং মোদির দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। শীতকালীন অধিবেশনে হাতে আরও অস্ত্র আছে তাঁদের। সেকথা বিলক্ষণ জানে মোদি সরকার। তাই তাঁকে সংসদে ঢুকতে না দেওয়াই লক্ষ্য বিজেপি-র।
নীতি কমিটির ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মহুয়াকে আর সংসদ থাকতে দেওয়া যায় না। অবিলম্বে তাঁর সাংসদ পদ বাতিল করা উচিত। শুধু তাই নয় মহুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত বলেও জানিয়েছে নীতি কমিটি। মহুয়ার কার্যকলাপকে 'অনৈতিক', 'অত্যন্ত আপত্তিকর', 'অপরাধমূলক' এবং 'জঘন্য' বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, শ্রীমতি মহুয়া মৈত্র এবং ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির মধ্যে যে টাকার লেনদেনের হদিশ মিলেছে, তাকে 'quid pro quo' অর্থাৎ বেআইনি লেনদেন বলে গন্য করা উচিত এবং ভারত সরকারের উচিত, বিষয়টি নিয়ে আইনি পথে, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে তদন্ত চালানো এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা শেষ করা।
যদিও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, তদন্ত করতে হবে, অর্থাৎ কোনও প্রমাণ মেলনি এখনও পর্যন্ত। তা হলে আগেভাগে মহুয়ার সাংসদ পদ বাতিলের সুপারিশ করা হল কোন যুক্তিতে? মহুয়া মোদি সরকার এবং আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলেই, তাঁর উপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন অভিষেক।