রায়পুর: ছত্তীসগঢ়ে নিখোঁজ সাংবাদিকের দেহ উদ্ধার হল। স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন ওই সাংবাদিক। সম্প্রতি ১২০ কোটি টাকার সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির পর্দাফাঁস করেন তিনি। সেই নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। এর পরই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। এার তাঁর দেহ উদ্ধার হল। সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হল দেহ। বর্তমানে ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। দুর্নীতিতে সরকারি আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। (Chhattisgarh Journalist Found Dead)


ছত্তীসগঢ়ের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন মুকেশ চন্দ্রকর। বাস্তারে ১২০ কোটি টাকার সড়ক নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে রিপোর্ট করেন তিনি। কন্ট্র্যাক্টর সুরেশ চন্দ্রকরের নাম উঠে আসে দুর্নীতির রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট সামনে আসার পর তদন্ত শুরু মুকেশ। এর পরই ১ জানুয়ারি হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান মুকেশ। ভাই নিখোঁজ বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন যুকেশ চন্দ্রকর। (Chhattisgarh News)


যুকেশ জানান, সুরেশের ভাই রিতেশ তাঁর ভাইকে মিটিং করতে ডাকেন। সেই মতো বাড়ি থেকে বেরোন মুকেশ। কিন্তু তার পর আর বাড়ি ফেরেননি। তাঁর ফোনটিও বন্ধ হয়ে যায়। বার বার ফোন করে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত থানায় যান যুকেশ। অভিযোগ পেয়ে পুলিশও তদন্ত শুরু করে। মুকেশকে খুঁজে বার করতে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান।


শুক্রবার বিজাপুর থেকে শেষ পর্যন্ত মুকেশের নিথর দেহ উদ্ধার হয়। চন্দ্রকরের চট্টানপাড়া এলাকায় সুরেশের একটি সম্পত্তি রয়েছে। সেখানেই শেষ বার দেখা গিয়েছিল মুকেশকে। তল্লাশি করতে গিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে মুকেশের দেহ দেখতে পায় পুলিশ। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, "ভাই নিখোঁজ বলে মৃতের দাদা ১ জানুয়ারি অভিযোগ জানিয়েছিলেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করি, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখি। ওঁর শেষ লোকেশনও বের করা হয় খুঁজে। শেষে সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে থেকে দেহ মেলে।"


মুকেশের দেহ উদ্ধারের পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের ডেকে পাঠানো হয়। তাঁর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সুরেশের ভাইকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরিবারের বাকিরা পলাতক বলে জানা গিয়েছে। 
বাস্তারে নির্মাণ সিন্ডিকেট চক্র এমনিতেই কুখ্যাত। প্রভাব খাটিয়ে, ঘুষের বিনিময়ে বরাত পাওয়ার ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলে হিংসা প্রয়োগের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে খবর করতে গিয়ে আগেও হুমকির মুখে পড়েছেন সাংবাদিকরা, হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। মুকেশের মৃত্যুতে তাই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পুলিশ যদিও নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। 



মুকেশের মৃত্যুতে ছত্তীসগঢ়ের বিজেপি সরকারের দিকে ইতিমধ্যেই আঙুল তুলতে শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদি লেখেন, 'ছত্তীসগঢ়ে সড়ক দুর্নীতির কথা তুলে ধরা মুকেশ চন্দ্রশেখরের মৃত্যু। নিখোঁজ থাকার পর কন্ট্রাক্টরের বাড়ির কাছ থেকে দেহ উদ্ধার হল। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিজেপি সরকারে কার ছত্রছায়ায় কন্ট্র্যাক্ট দেওয়া হয়? সাংবাদিকরা কেন গোদি মিডিয়ায় যুক্ত হচ্ছেন, এই ঘটনাও একটি উদাহরণ। মুকেশ চন্দ্রশেখরের পরিবার ন্যায় বিচার পাক'।



মুকেশের এমন পরিণতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এডিটর্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়াও। দোষীরা রেহাই পাবে না বলে জানিয়েছেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেব সাই। কিন্তু তাঁর সরকারের দিকেও আঙুল উঠছে।