নয়াদিল্লি: করোনা কালের স্মৃতি ফিরল চিনে। ফের কোয়ারান্টিন চালু হল সেদেশে। এই মুহূর্তে চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের সঙ্গে যুঝছে তারা। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ অংশে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে সংক্রমণ। দক্ষিণের গুয়াংদং প্রদেশের ফোশান শহরে সংক্রমিতের সংখ্য়া ৭০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে সংক্রমিত রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে হাসপাতালে। মশারির মতো জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে শয্যাগুলি। (China News)

ফোশান থেকেই চিকুনগুনিয়া দেশের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে নতুন করে অতিমারি করতে না হয় বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর সেই কারণেই কোয়ারান্টিন চালু করা হয়েছে দেশে। চিকুনগুনিয়ায় সংক্রমিত হলে অন্তত পক্ষে এক সপ্তাহ নিভৃতবাসে থাকতে হবে রোগীকে। তার আগে যদি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে, সেক্ষেত্রে বেরনো যাবে। (Chikungunya Outbreak in China)

এখনও পর্যন্ত কোনও চিকুনগুনিয়া রোগীর মৃত্যুর খবর আসেনি। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যতই হিমশিম খেতে হচ্ছে চিনকে। কারণ প্রায় ২০ বছর আগে চিনে চিকুনগুনিয়া দেখা দিলেও, তার পর থেকে কখনও গণহারে সংক্রমণ ছড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। একসময় চিকুনগুনিয়া বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়ানো, বাইরে থেকে আসা সংক্রমণ হিসেবেই গণ্য হতো। তবে বর্তমানে সেটি প্রত্যেক দেশের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চিকুনগুনিয়া সরাসরি একেজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে না ছড়ালেও, সংক্রমণের ব্যাপ্তি নির্ভর করে ভৌগলিক পরিবেশের উপর। আবহাওয়া সহায়ক হলে এডিস মশা দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং তা থেকে সংক্রমণও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

ফোশাম ছাড়াও, গুয়াংঝৌ, শেনঝেং, দোংগুয়ান, ঝোংশানে চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে ফোশানে প্রথম একজনের শরীরে চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে। সেই থেকে যত দিন গিয়েছে, উত্তরোত্তর বেড়েছে সংক্রমণ। গত ৪ অগাস্ট হংকংয়ে পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, চিনে যাওয়া নিয়ে নাগরিকদের সতর্ক করেছে আমেরিকা। তাদের Disease Control And Prevention সেন্টার চিনে বাড়াতে যাওয়া নিয়ে দ্বিস্তরীয় সতর্কতা জারি করেছে। একান্ত যদি যেতেও হয়, সেক্ষেত্রে ইনসেক্ট রেপেল্যান্ট রাখতে বলা হয়েছে সঙ্গে। ফুলহাতা দামা পড়তে বলা হয়েছে, বাড়ির বাইরে না বেরনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গর্ভবতী মহিলাদের চিন না যাওয়াই ভাল বলে জানিয়েছে আমেরিকা। 

সংক্রমণ ঠেকাতে চিনের তরফেও সবরকম চেষ্টা চলছে। করোনার সময়ে যেমন কোয়ারান্টিন চালু করা হয়েছিল, এবারও তার অন্যথা হয়নি। সমস্ত হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, পানীয় জল কোথা থেকে আসছে, কোথাও জমা জল আছে কিনা, তাও খতিে দেখা হচ্ছে এই মুহূর্তে। নিয়ম লঙ্ঘন করলে অপরাধমূলক জরিমানা চাপানো হবে বলে জানানো হয়েছে নাগরিকদের। কীটনাশক ছড়ানোর পাশাপাশি, গবেষণাগারে তৈরি ‘Elephant Mosquitoes’ ছাড়া হচ্ছে, যাতে এডিস মশার লার্ভাকে নিকেশ করে। পুকুরে মশার লার্ভা খেতে অভ্যস্ত মাছও ছাড়া হচ্ছে। ঠিক কোন কোন জায়গা মশার আঁতুড়ে পরিণত হয়েছে, তা বোঝার জন্য ড্রোনের মাধ্যমে চলছে নজরদারি। 

কিন্তু হঠাৎ এমন পরিস্থিতি তৈরি হল কেন চিনে? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, একদিকে অতিবৃষ্টি, অন্য দিকে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মশার বংশবিস্তারের সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে চিনে। এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেও দায়ী করা হচ্ছে। ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভারত, মেক্সিকো, নাইজিরিয়া, পাকিস্তান, তাইল্যান্ড, ফিলিপিন্সের মতো দেশে চিকুনগুনিয়া বিপজ্জনক রোগ হিসেবেই চিহ্নিত। ২০০৬ সালে ভারতে যখন চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়, প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হন। কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রে সংক্রমিতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুরেও সেই সময় হাজার হাজার মানুষ চিকুনগুনিয়ায় সংক্রমিত হন।