দুই দিন আগের ঘটনা। মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা জেলায় কিডনির অসুখে পরপর শিশুমৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ ছড়ায়। তারপর দেখা যায়,  এই শিশুদের প্রাথমিক লক্ষণ ছিল জ্বরজারি, সর্দিকাশি। একটি কাফ-সিরাপ খাওয়ার পরই তাদের অবস্থার অবনতি হয়। কিডনি বিকল হয়ে মারা যায় ৬ শিশু (শেষ খবর পাওয়া অনুসারে)। ১ দিনের মধ্যেই রাজস্থান থেকে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনা তোলপাড় ফেলে দেয়। অভিযোগ ওঠে, একটি জেনেরিক একটি কাফ সিরাপ খেয়েই এই ঘটনা।  জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে রাজস্থানে দুই শিশুর মৃত্যু হয় এবং কমপক্ষে ১০ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে।  অভিযোগ, কেসন ফার্মা নামক একটি কোম্পানির  ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড যৌগ থাকা কাশির সিরাপ খেয়ে ৫ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায় এক শিশু। তার আগে কাফ সিরাপ খাওয়ার পর ২ বছরের এক শিশুর মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তদন্তের নির্দেশ দেয় রাজস্থান সরকার। 

Continues below advertisement

ঘটনাটি সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং খিনসর দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন। তবে তদন্তের পর সরকারের দাবি, শিশুদের মৃত্যু কাশির সিরাপ খেয়ে ঘটেনি। বিভাগ তদন্ত রিপোর্টে দাবি, কোনও চিকিৎসক এই ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দেননি। তা সত্ত্বেও, সিকর জেলার একটি ঘটনায় শিশুদের জন্য নিষিদ্ধ কাশির ওষুধ লেখায় এক ডাক্তার এবং এক ফার্মাসিস্টকে বরখাস্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  আরএমএসসিএল (রাজস্থান মেডিকেল সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেড) সংশ্লিষ্ট ওষুধের সরবরাহ ও বিতরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । 

তদন্তে দাবি ভরতপুরের কালসাডা গ্রামের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী মনু যোশী গত ২৫ সেপ্টেম্বর কাশি, সর্দি ও জ্বরের চিকিৎসার জন্য সিএইচসি কালসাডায় যান। সেখানে ডাক্তার তাঁকে কিছু ওষুধ দেন, যার মধ্যে কাশির ওষুধ ড্যাকট্রামেট্রোফেন হাইড্রোক্লোরাইডও ছিল। পরে মনু যোশী তাঁর তিন বছরের ছেলে গগনকেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এই ওষুধ খাইয়ে দেন। গগন আগে থেকেই সর্দি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। অবস্থা খারাপ হলে তাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে জয়পুরের জে কে লোন হাসপাতালে রেফার করা হয়।  ডাক্তাররা চিকিৎসা করেন এবং গগনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। ২৭  সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই ঘটনার সঙ্গে ওষুধের সম্পর্ক নেই। 

Continues below advertisement

যাদের মৃত্যু নিয়ে জলঘোলা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজনের নাম সম্রাট।  তদন্তে দাবি,  সম্রাট আগে থেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর তার মা নহনি চিকিৎসার জন্য উপকেন্দ্র মালাহ-এ গিয়েছিলেন, যেখানে সাধারণ ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সম্রাটকে ভরতপুর থেকে জয়পুরে রেফার করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। অর্থাৎ, মৃত্যুর সঙ্গে কাশির ওষুধের সরাসরি কোনও সম্পর্ক ছিল না।

সিকর জেলার খোরি গ্রামের এক শিশুর মৃত্যু নিয়েও তদন্ত করা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭ জুলাই শিশুটিকে জ্বর ও সর্দির জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার ডেক্সট্রোমেথরফান দেননি। কিন্তু ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে ওই শিশুর সামান্য কাশি হওয়ায় তার মা বাড়িতে আগে থেকে রাখা কাশির এই সিরাপ ৫ মিলি খাইয়ে দেন। তারপর সকালে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তারপর  হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার। তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে শিশুর মৃত্যু চিকিৎসকের লেখা ওষুধে নয়, বরং বাড়িতে আগে থেকে মজুত ওষুধ খাওয়ানোর কারণে হয়েছে।

হাতিদেহ পিএইচসি-তে ডাক্তার ও ফার্মাসিস্ট বরখাস্ত

তদন্তে আরও জানা গেছে যে, সিকর জেলার হাতিদেহ পিএইচসি-তে একজন ডাক্তার ও ফার্মাসিস্ট শিশুদের কাশির নিষিদ্ধ ওষুধ লিখেছিলেন। সেই অভিযোগে ডাঃ পলক (চিকিৎসক) এবং পপ্পু সোনি (ফার্মাসিস্ট)-কে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর পরে স্বাস্থ্য বিভাগ জারি করে অ্যাডভাইজরি। চিকিৎসকদের ওষুধ লেখার সময় নির্দিষ্ট প্রোটোকল অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।