নয়াদিল্লি: গালওয়ান সংঘর্ষের পর এখনও দু'দেশের সম্পর্কে বিশ্বাস ও আস্থা পুরোপুরি ফেরেনি, তার মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (Pak Occupied Kashmir) একাংশে বেআইনি ভাবে চিনা সড়ক নির্মাণের খবরে নতুন করে উত্তেজনার চোরাস্রোত। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির উপগ্রহচিত্রে (Illegal Road Construction By China) এই সড়কের ছবি ধরা পড়ে বলে সূত্রের খবর। এবিপি আনন্দ আলাদা করে ছবির সত্যতা যাচাই করেনি। তবে এই নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে এর মধ্যেই যথেষ্ট সাড়া পড়ে গিয়েছে।
কী জানা গেল?
উপগ্রহচিত্রে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে সড়কটি শাকসগাম উপত্যকায়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সিয়াচেন হিমবাহের কাছে থাকা এই উপত্যকাটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অংশ হলেও ১৯৬৩ সালে এর দখল চিনের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। যে সড়কটি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সেটি চিনের জিনঝিয়াং প্রদেশের G219 হাইওয়ের একাংশ থেকে শুরু হয়ে পর্বতের একাংশে মিশে যায়। ভারতের উত্তরতম বিন্দু, ইন্দিরা পয়েন্ট থেকে বেআইনি এই সড়কটির দূরত্ব মেরেকেটে ৫০ কিলোমিটার। উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে আরও জানা গিয়েছে, গত বছর জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হয়। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই ধরনের সম্পূর্ণ বেআইনি নির্মাণ দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি হতে পারে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি কর্পসের প্রাক্তন কমান্ডার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাকেশ শর্মার মতে, এই ধরনের নির্মাণ পুরোপুরি বেআইনি। কূটনৈতিক ভাবে এর বিরোধিতা করা উচিত ভারতের। তবে এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে ভারত সরকারের তরফে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া আসেনি।
কেন মাথাব্যথার?
সড়কটি যেখানে তৈরি করা হয়েছে, সেটি কাশ্মীরের 'ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট' অংশের মধ্যে পড়ে। আর অখণ্ডই কাশ্মীর ভারতের, এই নিয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে নয়াদিল্লির। ফলে এই ধরনের নির্মাণ সম্পূর্ণভাবে ভারতের দিক থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বেআইনি। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালে এই ট্র্যাক্টটি সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে, গায়ের জোরে দখল করে নিয়েছিল পাকিস্তান। পরে, ১৯৬৩ সালে দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত-সমঝোতা করে ওই এলাকার অধিকার চিনের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। খুুব স্বাভাবিক ভাবেই ভারত, এই সীমান্ত-সমঝোতা বৈধ বলে মনে করে না। এদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই এলাকায় যদি কোনও ধরনের রদবদলের অর্থ ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার উপর আঘাত। সব মিলিয়ে এই সড়ক নির্মাণের বিষয়টি পুরোপুরি বেআইনি বলে মনে করছেন তাঁরা। তার উপর, গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে দু'দেশের সম্পর্ক যে জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে এই ধরনের পদক্ষেপ দু'দেশের মধ্যে অবিশ্বাসের আবহ আরও বাড়াবে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। তা ছাড়া, এই ধরনের সড়ক দেশের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা। প্রসঙ্গত, চিন আকসাই চিন মালভূমি অঞ্চলকে নিজেদের মানচিত্রে দেখানোয় গত বছর তীব্র কূটনৈতিক প্রতিবাদ করেছিল ভারত। কিন্তু তার পরও কি অবস্থার বদল হল? উত্তরের অপেক্ষায় গোটা দেশ।
আরও পড়ুন:বিশ্বের সবচেয়ে মহার্ঘ্য স্থান! 'জেমস বন্ড' ছবির শ্যুটিং স্পটে বিয়ে সারবেন অনন্ত-রাধিকা?