নয়াদিল্লি: আর মাত্র কয়েক দিন, তার পরই অবসরগ্রহণ। সেই আবহে ফের বিচারব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করলেন দেশের বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে এবার মন্তব্য করলেন তিনি। তাঁর মতে, সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিলেই বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা প্রমাণিত হয় না। বিচারপতিদের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা রাখা উচিত বলেও মন্তব্য করলেন তিনি। (CJI DY Chandrachud)


অবসরের আগে দিল্লির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। সেখানে তিনি জানান, নির্বাচনী বন্ডকে যখন অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন তিনি, নির্বাচনী বন্ড নিয়ে যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন, সেই সময় সকলে প্রশংসা করেছিলেন, তাঁকে 'স্বাধীন' বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে রায় না দিলেই অন্য সুর শোনা যায়। (Independence of Judiciary)


বিদায়ী প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের কথায়, "নির্বাচনী বন্ড নিয়ে ওই রায় দেওয়ার অর্থ তুমি স্বাধীন। কিন্তু কোনও রায় যদি সরকারের পক্ষে যায়, তাহলে স্বাধীন নও। আমার কাছে স্বাধীনতার সংজ্ঞা কখনওই এমন নয়।" গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৮ সালে কেন্দ্রের চালু করা ওই নির্বাচনী বন্ড আসলে বিজেপি-কে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতেই আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। সেই প্রসঙ্গেই এমন মন্তব্য করলেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি। 


বিদায়ী প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেন, "বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, সরকারি প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা। কিন্তু বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা বলতে শুধুমাত্র তা বোঝায় না। আমাদের সমাজ পাল্টে গিয়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে... যাদের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে, তারা বৈদ্যুতিন মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে চাপসৃষ্টি করে, যাতে আদালতের রায় তাদের পক্ষে যায়। তাদের পক্ষে রায় না গেলেই, আপনি স্বাধীন নন। এতে ঘোর আপত্তি রয়েছে আমার। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার অর্থ, নিজের বিবেকের কথা শুনে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। আইন এবং সংবিধানের পাশাপাশি, অবশ্যই বিবেকের প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে।"


বিদায়ী প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতে, মানুষের উচিত বিচারপতিদের উপর সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। রায় যার পক্ষেই যাক না কেন, বিচারের ভারসাম্য যাতে বজায় থাকে, তা বিচারপতিরাই ঠিক করবেন। তাঁর কথায়, "যে যে মামলা সরকারের বিপক্ষে যাওয়া উচিত, সরকারের বিরুদ্ধেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। কিন্তু কোনও মামলায় যদি সরকারের পক্ষে রায় দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেখানে আিন মেনেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিচারব্যবস্থাকে স্থিতিশীল এবং প্রাণবন্ত রাখতে হলে এই বার্তা সকলের কাছে পৌঁছনো উচিত।"