নয়াদিল্লি: নরেন্দ্র মোদিকে ৭১-তম প্রজাতন্ত্র দিবসে উপহার হিসাবে পাঠানোর জন্য অ্যামাজনে এক করপি ভারতের সংবিধানের অর্ডার দিল কংগ্রেস। সেটি কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের ই ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে (পিএমও) পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কংগ্রেস দলীয় ট্যুইটার হ্যান্ডলে সেই অর্ডারের রিসিপ্টের ছবি পোস্ট করে কটাক্ষ করে বলেছে, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, শীঘ্রই দেশের সংবিধান আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। কখনও দেশটাকে টুকরো করা থেকে বিরত থাকার সময় পেলে দয়া করে পড়বেন।


যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়নি। কংগ্রেস একটি বার্তার স্ক্রিনশট দিয়েছে যাতে লেখা আছে, আপনার প্যাকেটটা বিক্রেতার কাছে ফেরত যাচ্ছে কেননা যে ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে সেটি নিতে অস্বীকার করা হয়েছে বা অর্ডার বাতিল হয়েছে। কংগ্রেস ট্যুইট করেছে, দেশবাসী, আমরা চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু মোদির সংবিধানে একেবারেই আগ্রহ নেই। তাহলে এখন আর কী করা যায়?

মজার ব্যাপার, রিসিপ্টে পেমেন্ট প্রক্রিয়া হিসাবে ‘পে অন ডেলিভারি’র উল্লেখ করা হয়, অর্থাত সংবিধানের কপিটি প্রধানমন্ত্রী বা ই ব্লকের কোনও কর্মী গ্রহণ করলে, তাঁকেই দাম মেটাতে হবে।
বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনে দেশের সংবিধানকে হাতিয়ার করা হচ্ছে। এই সংক্রান্ত নানা পোস্টও শেয়ার করেছে কংগ্রেস। সিএএ সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ তুলে কংগ্রেস মোদির উদ্দেশ্যে সমতার অধিকার, বৈষম্য, বিভাজনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদের অংশ শেয়ার করেছে। তারা ট্যুইট করে, জাতি-ধর্ম, সম্প্রদায়, লিঙ্গ নির্বিশেষ সব মানুষকে সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদের আওতায় সমান চোখে দেখা হয়। কিন্তু বিজেপি এটা বুঝতে ব্যর্থ। সরকারের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে এই অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ লঙ্ঘিত হয়েছে। বিজেপিকে নিশানা করে সংবিধানের মুখবন্ধের ব্যাখ্যাও একটি ভিডিওতে দিয়েছে কংগ্রেস। দলীয় সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর প্রতিবাদসভায় মুখবন্ধ পাঠের ক্লিপিংও শেয়ার করেছে তারা।
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে গত শনিবার সনিয়া গাঁধী রাজনৈতিক পক্ষপাত, কূটকাচালির ঊর্ধ্বে উঠে সংবিধান ও তার মূল্যবোধ রক্ষায় একজোট হওয়ার আবেদন করেন দেশবাসীকে। ‘সুগভীর চক্রান্তে’র মাধ্যমে তাদের আঘাত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। সনিয়া বলেন, দেশকে ধর্ম, আঞ্চলিকতাবাদ ও ভাষার ভিত্তিতে টুকরো করা ও সংবিধানকে খাটো করা, তাতে অন্তর্ঘাতের লক্ষ্যে দেশবাসীকে বিভক্ত করার জন্য একটা ভাষ্য গড়ে তুলতে সুগভীর চক্রান্ত চলছে। একুটা অভূতপূর্ব ভয়, আতঙ্ক, অস্থিকতার আবহাওয়া চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের ওপর। সাধারণ দেশবাসী বিশ্বাস করছে, বর্তমান শাসককূলের হাতে সাংবিধানিক মূল্যবোধ আর সুরক্ষিত নয়।