নয়াদিল্লি: কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে ভ্রমণ। সূচনাপর্বে 'ভারত জোড়ো যাত্রা' নিয়ে সন্দিগ্ধ ছিলেন অনেকেই। কিন্তু প্রচলিত ধারণা ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের ভাবমূর্তিও যথেষ্ট পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। এই মুহূর্তে চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে এগোচ্ছে তাঁর নেতৃত্বাধীন 'ভারত জোড়ো যাত্রা' (Bharat Jodo Yatra)। তার জন্য সমমনস্ক বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে একজোট হয়ে এগিয়ে এসে জম্মু-কাশ্মীরে পদযাত্রার চূড়ান্ত পর্বে যোগদানের আমন্ত্রণ জানাল কংগ্রেস (Congress)। পদযাত্রায় বিরোধী দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসলে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) আগে বিরোধী ঐক্য প্রদর্শনই কংগ্রেস এবং রাহুলের লক্ষ্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


২০২৪-এর আগে বিরোধী ঐক্য প্রদর্শনই লক্ষ্য!


কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের তরফে ওই আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। তাতে ২১টি সমমনস্ক বিজেপি-বিরোধী দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাতে নাম রয়েছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি গিয়েছে সংযুক্ত জনতা দলের প্রধান তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, ডিএমকে সভাপতি তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তথা বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, তেলুগু দেশম পার্টির নেতা এন চন্দ্রবাবু নায়ডু, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতী, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন, বাম  নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এবং ডি রাজার কাছেও। 


জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুখ আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির প্রধান শরদ পওয়ার, পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান তথা জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, রেভলিউশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি, হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা, মারুমালার্চি দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজগম, বিধুথালাই চিরুথাইগালের কাছেও পৌছেছে আমন্ত্রণপত্র। 


উল্লেখযোগ্য ভাবে, আমন্ত্রণ জানানো হয়নি আম আদমি পার্টি এবং দলের নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা ভারত রাষ্ট্র সমিতির প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমন্ত্রণ জানানো হয়নি কংগ্রেস ত্যাগী গোলাম নবি আজাদকেও, যিনি ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ আজাদ পার্টি নামে নিজের আলাদা দল গঠন করেছেন। ঘটনাচক্রে এঁদের কারও সঙ্গেই এই মুহূর্তে কংগ্রেসের সখ্য নেই বলে শোনা যায় লুটিয়েন্স দিল্লিতে।


আরও পড়ুন: World Best Passports 2023: কোন দেশের পাসপোর্ট সবচেয়ে শক্তিশালী, সামনে এল সূচক, তালিকায় রয়েছে ভারতও


কারণ গুজরাত থেকে হিমাচল প্রদেশ, গোয়া, একাধিক রাজ্যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে কংগ্রেসের লড়াইকে দুর্বল করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে। এমনকি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের মুখ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার প্রচেষ্টাও কেজরিওয়ালের তরফে করা হয় বলে শোনা গিয়েছে। একই ভাবে, বিজেপি-র বিরোধিতা করলেও, ২০২৪-এ কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃতীয় বিরোধী জোট গড়ার পক্ষে প্রকাশ্যে সওয়াল করেছেন কেসিআর। আজাদও কংগ্রেস ছাড়ার সনয় রাহুলের বিরুদ্ধেই কার্যত বিষোদ্গার করেছিলেন। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে তো বটেই, বিরোধী জোটের ক্ষেত্রেও তাঁদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে এর আগে, বিজেপি বিরোধী জোটকে মজবুত করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন মমতা। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর তাই সটান দিল্লিও ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে দফায় দফায় সনিয়া গাঁধী, রাহুল, আনন্দ শর্মা, শরদ পওয়ারদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। আলাদা করে এমকে স্ট্যালিন, কেসিআর-এর সঙ্গেও দেখা করেন মমতা। তবে সে বার সনিয়া-রাহুলের তরফে তেমন সাড়া মেলেনি বলে শোনা যায়। তা নিয়ে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে মমতাও অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন। তবে সাবেক কংগ্রেসি হওয়ায় মমতার সঙ্গে সনিয়ার সুসম্পর্ক রয়েছে বলে শোনা যায়। তাই বাংলায় বিরোধ থাকা সত্ত্বেও মমতাকে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে কংগ্রেসের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।


সম্প্রতি রাহুল নিজেও বিরোধী ঐক্যে শান দিতে তৎপর হন। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ চলাকালীনই বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান তিনি। দেশবাসীর সামনে বিজেপি-র বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে হলে একজোট হওয়া প্রয়োজন বলে মতামত জানান রাহুল। উত্তরপ্রদেশ হয়ে যাওয়ার সময়ই বিরোধী শিবিরের অনেককে চিঠি লেখেন তিনি। তার পরই কংগ্রেসের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠি লিখে সমমনস্ক দলগুলিকে কাশ্মীরে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র চূড়ান্ত পর্যায়ে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হল।


বিরোধী ঐক্যে শান দিতে তৎপর রাহুল


রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় ইতিমধ্যেই বিরোধী শিবির থেকে অনেকে অংশ নিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন উদ্ধব-পুত্র আদিত্য ঠাকরে, পওয়ার-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে। দিল্লিতে রাহুলের সঙ্গে পদযাত্রায় হাঁটেন ফারুখ, কমল হাসানও। পদযাত্রায় যোগ না দিলেও, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী রাহুলকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান। গত ৭ সেপ্টেম্বর কন্যাকুমারী থেকে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু করেন রাহুল। এখনও পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে পার করেছেন সকলকে নিয়ে। কাশ্মীরে পৌঁছলে ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পেরনো হবে সব মিলিয়ে।