নয়াদিল্লি: আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েন। সেই আবহেই একফ্রেমে নরেন্দ্র মোদি ও শি চিনপিং। সংঘাত ভুলে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছেন তাঁর। সেই নিয়ে এবার কেন্দ্রের মোদি সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করল কংগ্রেস। ভারতের ক্ষতি করেছে যে চিন, তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের পরিবর্তে মোদি হাসিমুখে ছবি তুলছেন বলে আক্রমণ শানিয়েছে তারা। এমনি অপারেশন সিঁদুরের সময়ও চিন যে পাকিস্তানকে সমর্থন করছিল, তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। (India-China Relations)
আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই চিন সফরে গিয়েছেন মোদি। রবিবার সেখানে চিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেন। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার বার্তা দেন দুই রাষ্ট্রনেতাই। কিন্তু হাসিমুখে চিনপিংয়ের সঙ্গে হাত মেলানোয় মোদিকে তীব্র আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। (Congress Slams Modi)
মোদি-চিনপিংয়ের ওই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে কংগ্রেস। তারা লিখেছে, ‘চিন গালওয়ান উপত্যকায় আমাদের ২০ সৈনিককে হত্যা করেছে। অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানের পাশে ছিল চিন। চিনই পাকিস্তানকে লাইভ আপডেট দিচ্ছিল। চিনের এই অসাধু আচরণের বিরুদ্ধে কী কড়া পদক্ষেপই না করলেন মোদি। হাসিমুখে চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাত মেলালেন’।
শুধু তাই নয়, গালওয়ান উপত্যকায় চিনের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত জওয়ানদের নামও প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। যে ২০ জনের নাম উল্লেখ করেছে, সেগুলি হল, ১) কর্নেল সন্তোষ বাবু, ২) নায়েব সুবেদার নুদুরাম সোরেন, ৩) নায়েব সুবেদার মনদীপ সিংহ, ৪) সুবেদার সতনাম সিংহ, ৫) হাবিলদার কে পলানী, ৬) হাবিলদার সুনীলকুমার, ৭) হাবিলদার বিপুল রায়, ৮) ল্যান্স নায়েক দীপক সিংহ, ৯) সিপাহি রাজেশ ঔরঙ্গ, ১০) সিপাহি কুন্দন কুমার, ১১) সিপাহি গণেশ রাম, ১২) সিপাহি চন্দ্রকান্ত প্রধান, ১৩) সিপাহি অঙ্কুশ, ১৪) সিপাহি গুরবিন্দর, ১৫) সিপাহি গুরতেজ সিংহ, ১৬) সিপাহি চন্দন কুমার, ১৭) সিপাহি কুন্দন কুমার, ১৮) সিপাহি আমন কুমার, ১৯) সিপাহি জয়কিশোর সিংহ, ২০) সিপাহি গণেশ হাঁসদা।
ভারত ও চিনের সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ। বার বার চিনের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে ভারত। গালওয়ানের সংঘর্ষ সেই তালিকায় রয়েছে যেমন, তেমনই লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশে ভারতের ভূখণ্ড দখলেরও অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে ভারতের বিদেশনীতি বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধী মোদি সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। চিন ভারতের ২০০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি করেছেন রাহুল।
চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এতদিন কড়া অবস্থান নিয়ে আসছিল মোদি সরকারও। কিন্তু শুল্ক নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে চিন ও ভারতের মধ্যে সমীকরণ বদলাতে দেখা যাচ্ছে। আমেরিকার বিরুদ্ধে, নিঃশর্ত ভাবে ভারতকে সমর্থন জানিয়েছে চিন। আর তার ঠিক পর পরই চিন সফরে গিয়েছেন মোদি। সেখানে বৈরিতা ভুলে বিশ্বাসযোগ্যতার কথা বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। চিনপিংও 'ড্রাগন ও হাতি'কে এক হওয়ার বার্তা দিয়েছেন, প্রতিবেশী হিসেবে সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু নতুন সমীকরণ গড়তে গিয়ে কি অতীত ভুলে গেলেন মোদি? এই প্রশ্নই উস্কে দিয়েছে কংগ্রেস।