কলকাতা: ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হয় যে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে মেনে চলা হবে ভারতের সংবিধান (Constitution)। এই সংবিধানে সরকারের গঠন, কার্যপদ্ধতি, ক্ষমতা ও কর্তব্য নির্ধারণ; মৌলিক অধিকার, নির্দেশমূলক নীতি, এবং নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শের রূপরেখাটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে এই সংবিধান কার্যকরী হয়। প্রথমে সংবিধান হাতের লেখায় তৈরি হয়েছিল।


শুধু তাই নয়, বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান ভারতের। জানা যায় এই সংবিধান রচনা করতে সময় লেগেছিল প্রায় তিন বছর। গণ পরিষদ স্বাধীন ভারতের সংবিধানের খসড়া রচনার ঐতিহাসিক কাজ সম্পূর্ণ করেছিল ১৬৫ দিনের এগারোটি অধিবেশনে। 


ভারতের সংবিধান প্রণেতা হিসেবে অবশ্যই বি আর আম্বেদকরের নাম সর্বাগ্রে থাকবে। তবে আমরা অনেকেই জানি না যে এই সংবিধানের ক্যালিগ্রাফ করেছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার প্রেম বিহারী নারাইন রাইজাদা। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ডাকে ইটালিক হরফে লিখেছিলেন তিনি। আর এই সংবিধানের  প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ তৈরি করেন শিল্পী নন্দলাল বসু। জানা যায়, সংবিধান লেখার সময় মোট ১০০ পেন নিবের ব্যবহার হয়েছিল। হিন্দি লেখার ক্ষেত্রে এই কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন আর এক শিল্পী বসন্ত কিসান বৈদ্য।


 







হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় হাতে লেখা সেই প্রথম সংবিধান আজও পার্লামেন্টের লাইব্রেরিতে একটি বিশেষ হিলিয়াম কেসে সংরক্ষিত রয়েছে। হিলিয়াম কেসে রাখার ফলে প্রথম সংবিধানটি আজও অক্ষত রয়েছে। 


নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ ও নীতি, যেগুলির ওপর ভিত্তি করে রচিত হয় সংবিধান। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সদ্য স্বাধীন ভারতীয়দের আশা আকাঙ্খা ও ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে রচিত হয়েছিল ভারতের সংবিধান। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের উদ্দেশ্য বর্ণিত রয়েছে।  


ভারতের সংবিধান রচিত হয়েছিল ১৯৪৬-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৯ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে। সময় লেগেছিল ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন। দেশের ইতিহাসে খুবই সংকটজনক ছিল ওই পর্ব। হিংসা, দেশভাগ, সামাজিক ও লিঙ্গ বৈষম্য এবং আর্থিক অনগ্রসরতা সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। সামাজিক সংহতি বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।