বেজিং: মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে বদলে গেল পরিস্থিতি। কিছুদিন আগেও দেশে সংক্রমণের সংখ্যা শূন্য বলে দাবি করেছিল চিন। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি বলছে ফের করোনা হানা দিয়েছে চিনে। এবার কোভিডের 'গ্রাসে' দেশের স্কুলশিশুরা।
স্বাভাবিকভাবেই দেশে ফের কোভিডের হানা নিয়ে চিন্তা বেড়েছে সরকারের। মনে করা হচ্ছে,চিনের টিকাকরণের প্রোগ্রাম কোনও কাজ দেয়নি। যার ফলে বর্তমানে বেড়েই চলেছে এই সংক্রমণ। শিশুরা কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবকদের মধ্যে। পরিসংখ্যান বলছে, দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে এই সংক্রমণ। যার ফলে এখন জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের।
শোনা যাচ্ছে, চিনের দক্ষিণ প্রদেশে কোভিডের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের হানা বেশ ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে।চিনের ফুজিয়ানে এখন ছড়িয়ে গিয়েছে কোভিডের এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। যা ঘুম ছুটিয়েছে প্রশাসনের। চিনের কোভিড বুলেটিন বলছে, ইতিমধ্যেই কোভিডের সংক্রমণ হানা দিয়েছে ৩৬ জন কিন্ডারগার্টেন শিশুর মধ্যে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইতিমধ্যেই ৩০০০-এর বেশি মানুষকে কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে। এরা সবাই কোভিড রোগীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাই তড়িঘড়ি আর ঝুঁকি নিতে চায়নি সরকার।
এই ৩০০০ কোয়ারান্টিনদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে। যাদের অভিভাবকদের থেকে আলাদা রাখা হচ্ছে। ফুজিয়ানের এই সংক্রমণের ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে চিনের প্রায় সব অঞ্চলে। নতুন করে কোভিডের কথা শোনা যাচ্ছে দেশের কিছু এলাকায়। বর্তমানে ফুজিয়ানকে নতুন উহান বলে মনে করছে বেজিং। এই উহান থেকেই প্রথম করোনা ছড়িয়েছিল চিনে। পরবর্তীকালে যা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ফের কোভিড বিধি নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে চিনে। ফুজিয়ানে পরিবহণ, সিনেমা হল ছাড়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শপিং মল। ইতিমধ্যেই ফুজিয়ানের শহর পুটিয়ানের সব নাগরিককে কোভিড টেস্ট করাতে বলেছে সরকার। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের আশঙ্কা, উহান ও নানজিংয়ের পর সবথেকে ভয়ানক কোভিডের সংক্রমণ ছড়াতে চলেছে ফুজিয়ানে।
ইতিমধ্যেই চিনের কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস এই পরিস্থিতি নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনওভাবেই যেন কোনও একটা জায়গায় সংক্রমণ নিয়ে ভীত না হন দেশবাসী। চিনের মতো বিশাল দেশে কোনও একটা জায়গায় এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। সেই কথা ভেবে অন্য জায়াগায় যাতায়াত বন্ধ করা যাবে না। এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাধারার ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্ষতি হবে।
সম্প্রতি দেশের টিকাকরণ নিয়ে চিনের সরকার জানিয়েছে, তিন চতুর্থাংশ নাগরিক ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তা সত্ত্বেও করোনা আতঙ্ক এখন পিছু ছাড়ছে না দেশে। চিনের এই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের শীর্ষ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ঝং নানশান জানান, চিনের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রায় ৭০ শতাংশ। সারা দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে আরও ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষকে টিকা দিতে হবে।
এদিকে স্কুল শিশুদের মধ্যে ভাইরাসের এই প্রকোপ নিয়ে মুখ খুলেছে উহান ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, যেসব শিশুরা ভ্যাকসিন নেয়নি তাদের দেহেই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। যেহেতু দেশের বেশিরভাগ শিশুরই এখনও কোভিড টিকাকরণ হয়নি তাই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সবার মধ্যে।