লন্ডন: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনের ইনস্টিটিউটে চলছে করোনা ভ্যকসিনের ফেজ টু ও থ্রি-র কাজ। ChAdOx1 কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এখন মানবশরীরে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগের উদ্যোগ চলছে। সেখানেই রাত-দিন এক করে কাজ করে চলেছেন কলকাতার মেয়ে চন্দ্রাবলী দত্ত। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগের তিনি অন্যতম সেনানি।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এমন এক মানবিক প্রয়াসের সঙ্গী হতে পেরে আমি গর্বিত, জানালেন ৩৪ বছরের বঙ্গতনয়া। সেখানে কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স ম্যানেজার পদে কর্মরত তিনি। তাঁর সম্মতি পেলেই পরীক্ষার স্তরে থাকা করোনার এই ভ্যাকসিন মানবশরীরে প্রয়োগ হবে।
'আশা নিয়ে আছি, এই ভ্যাকসিনগুলি পরবর্তী স্তরে কাজ করবে, সারা পৃথিবী এর সাফল্যের প্রতীক্ষায় আছে', বললেন কলকাতার মেয়ে চন্দ্রাবলী। 'আমরা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাড়তি পরিশ্রম করছি সাফল্যের জন্য। যাতে মানুষ এই ভাইরাসের গ্রাস থেকে বাঁচতে পারে। দিন-রাত সকলে পরিশ্রম করছেন। এই গবেষণার সঙ্গী হতে পেরে আমি গর্বিত।'
কলকাতা থেকে সুদূর অক্সফোর্ডে গবেষণা করতে যাওয়া চন্দ্রাবলী চান, বায়োসায়েন্সের গবেষণায় মেয়েরা আরও এগিয়ে আসুন। এই ক্ষেত্র এখনও পুরুষরাই বেশি কাজ করেন।
'যদিও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় টাকার অঙ্কটা মারকাটারি কিছু নয়। কিন্তু আপনার উৎসাহ যদি থাকে, যদি স্ট্রাগল করতে তৈরি থাকেন, এগিয়ে আসুন। এই বিষয়ে পড়াশুনো করুন। সবথেকে বড় কথা, এই কাজের মাধ্যমে, আপনি মানুষের উপকার করছেন।', বললেন তিনি।
ছোট থেকেই জীববিদ্যা আর অঙ্কে ব্যাপক উৎসাহ ছিল চন্দ্রাবলী। তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি পড়েছেন কলকাতাতেই। কম্পিউটার সায়েন্সে নিয়ে পড়াশুনো করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের লোভনীয় চাকরিও করছিলেন। কিন্তু মন পড়েছিল তাঁর বায়োটেকেই।
তাই ইউনিভার্সিটি অফ লিডস থেকে বায়ো টেকনোলজিতে স্নাতোকত্তর পড়াশুনো করলেন। তারপর চলে এলেন লন্ডনে। মায়ের মন চায়নি, একমাত্র সন্তান দেশ ছাড়ুক। বাবার সম্মতি ছিল বরাবরই। বলছিলেন কলকাতার কন্যা।
প্রথম প্রথম বিদেশে থাকা খাওয়ার খরচা জোগাতে সুপারমার্কেট, পিৎজার দোকানেও কাজ করেছেন চন্দ্রাবলী।
মনে পড়ে, ল্যাবের কাজ দ্রুত সেরে 'টেসকো'-য় দৌড়লাম সন্ধে সাড়ে ৬টা থেকে ১২ টা অবধি কাজ করার জন্য। তারপর যখন বাড়ি ফিরতাম খাওয়ার সময়টুকুও পেতাম না। ঘুমিয়ে পড়তাম। দিনের পর দিন রাতে ৩ ঘণ্টা ঘুমিয়েছি।
পড়া শেষ করে চাকরি খোঁজাটাও বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল, বললেন তিনি। অনেকেই সেই সময় আশা ছেড়ে দিয়ে দেশে ফিরে গেছিল, আমি হাল ছাড়িনি। অবশেষে 'গ্ল্যাক্সোস্মিদলাইন'-এ কাজে যোগ দেওয়া। তারপর আস্তে আস্তে অক্সফোর্ডের দিকে এগোন।
এখন করোনার লড়াইয়ে সামনে থেকে লড়ছেন চন্দ্রাবলী। লকডাউনের মধ্যেই চলছিল কাজ। এদিকে কলকাতায় বাবা-মা ছিলেন ভয়ানক চিন্তায়। সে কথাও জানালেন চন্দ্রাবলী। রোজ বাড়িতে ভিডিও কল করে মা-বাবাকে বুঝিয়েছেন তিনি।
কবে আসবেন কলকাতায়? সেটাই এখন লক্ষ টাকার প্রশ্ন। তবু আশা রাখছেন, বছর শেষে ক্রিসমাসের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারবেন।