হায়দরাবাদ: করোনাভাইরাসের ফলে দেশে এখুন কার্যত মেডিক্যাল জরুরি অবস্থা। সেই প্রেক্ষিতে রবিবারই চিকিৎসক ও মেডিক্যাল কর্মীদের করতালির মাধ্যমে অভিবাদন জানিয়েছিল গোটা দেশ। কিন্তু, সেই করতালির আওয়াজ ফিকে হওয়ার আগেই চিকিৎসকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাঁদেরকে মারধর করার অভিযোগ উঠল দক্ষিণের দুই রাজ্যে।
খবরে প্রকাশ, তেলঙ্গনার খাম্মাম জেলায় মমতা মেডিক্যাল কলেজের এক স্নাতকোত্তর চিকিৎসক-পড়ুয়া তরুণীকে মারধর করার অভিযোগ উঠল কর্তব্যরত পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মঙ্গলবার লকডাউনের সময় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ এমার্জেন্সি কল আসলে বেরোতে হয় ওই চিকিৎসককে। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাঁকে চেকপোস্টে আটকান এক কনস্টেবল। তিনি মহিলাকে উপস্থিত এসিপি-র সঙ্গে কথা বলতে বলেন। অভিযোগ, পরিচয়পত্র ও কারণ বলা সত্ত্বেও ওই উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক তরুণী চিকিৎসককে মারধর করেন।
মহিলার অভিযোগ, ওই পুলিশকর্তা তাঁকে বলেন, কোনও লজ্জা থাকলে বাড়ি চলে যেতে। শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও লকডাউনে কেন বাড়ির বাইরে রেরিয়েছেন, সেই নিয়েও চিকিৎসককে কুকথা বলেন। মহিলা যখন তাঁর যুক্তি দেখান, তখন ক্ষিপ্ত পুলিশকর্তা তাঁর চুলের মুঠি ধরে থানায় নিয়ে যায়। মহিলার অভিযোগ, থানায় কোনও মহিলা পুলিশ ছিল না। ওই পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তরুণী চিকিৎসক।
যদিও, পরে ওই পুলিশকর্তা নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। মহিলা বলেন, আমরা সকলে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। পুলিশ ও চিকিৎসক-- দুজনই জনসেবক। আমার মনে হয় না এটা নিজেদের মধ্যে লড়াই করার সঠিক সময়। মহিলী জানান, পুলিশকর্তা তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় তিনি আর এটা নিয়ে এগোননি। য়দিও, তরুণী পরামর্শ, এভাবে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মারধর করবেন না। আমরা এমনিতেই এই ভাইরাসের চিকিৎসা করতে গিয়ে মানসিক বিপর্যস্ত। নতুন করে আর মানসিক যন্ত্রণা দেবেন না।
তবে, অভিযুক্ত এসিপির বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও, আরেক চিকিৎসককে তিনি হেনস্থা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই চিকিৎসকের দাবি, হাসপাতাল যাচ্ছিলেন তিনি। পথে আটকায় পুলিশ। তাঁকে অকথ্য ভাষায় ব্যবহার করেন ওই আধিকারিক। ওই তরুণের অভিযোগ, তাঁর গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার হুমকিও দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমরা মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিই। আর পুলিশ এভাবে আাদের সঙ্গে ব্যবহার করে। ওই চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন, এসিপিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
এদিকে, খাম্মাম থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ওয়াড়াঙ্গলের রাজ্য পরিচালিত হাসপাতালের চিকিৎসকদের নির্দেশ দেওয়া হয় হোস্টেল ছাড়তে। কারণ, তা আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যদিও, ওই চিকিৎসকদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে। কিন্ত, এখনই তা সম্ভব না হওয়ায় কাছেপিঠে নিজেদের জন্য ভাড়ার বন্দোবস্ত করতে গিয়ে মাঝ-সমুদ্রে গিয়ে পড়েন ওই চিকিৎসকরা।
কারণ, বেশিরভাগ বাড়িওয়ালা চিকিৎসকদের আক্রান্ত ও নোংরা বলে দূর করে দেন। এক চিকিৎসকের দাবি, এক বাড়িওয়ালা তাঁকে বলেন, আপনারা চিকিৎসক। আপনারা এখানে থাকলে আমরাও সংক্রমিত হব। অভিযোগ, অনেক বাড়িওয়ালা আবার অগ্রিম নেওয়া টাকাও ফেরত দিয়ে দিয়েছেন। ওই চিকিৎসকের অভিযোগ, হাততালি দিয়ে আভিবাদন জানানোর পর ঘর কেড়ে নেওয়ার মানে কী!