কলকাতা: কখনও করোনা আক্রান্ত অন্তঃস্বত্ত্বা, কখনও সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মায়ের শরীরে মিলছে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব। একরত্তির স্বাস্থ্য নিয়ে আতঙ্কিত হয়েছেন পরিবারের লোকজন।
সারা দেশে করোনার দাপট অব্যাহত। মারণ ভাইরাসের থাবায় প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। কড়া সুরক্ষাবর্মের মধ্যে থেকেও করোনার সংক্রমণ এড়িয়ে যেতে পারছেন না খোদ চিকিৎসকরাই। সেখানে গর্ভবতী মেয়েরা হাসপাতালে কোনও পরীক্ষা করাতে এসে কিংবা অন্য কোনও সূত্রে করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়।
কলকাতা শহরেই ঘটেছে এমন ঘটনা। বিভিন্ন হাসপাতালে প্রসূতিরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ শরীরে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে মা হওয়ার পর। সেক্ষেত্রে কতটা সুরক্ষিত গর্ভস্থ বা সদ্যোজাত? এই প্রশ্নটা ভাবাচ্ছে অনেককেই।


মা করোনা আক্রান্ত হলে গর্ভস্থ শিশু কতটা সুরক্ষিত?
এই বিষয়ে কিছুটা স্বস্তির বার্তা শোনালেন কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপিকা চিকিৎসক বন্দনা বিশ্বাস।  'বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, অন্তঃস্বত্ত্বা করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়লেও, সংক্রমিত হয়নি গর্ভস্থ শিশু। অর্থাৎ করোনার ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশনের সম্ভাবনা কম। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই কথা বলা যাচ্ছে।'
এই বিষয়ে কয়েকটি জিনিস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন গর্ভাবস্থার কোন পর্যায়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন মা। যদি সংক্রমণ প্রথম ট্রাইমেস্টারে হয়ে থাকে, তাহলে শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে, গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। খেয়াল রাখতে হবে ব্লিডিং বা রক্তপাত হচ্ছে কি না। যদি তেমন কিছু হয়, দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
গর্ভাবস্থার থার্ড ট্রাইমেস্টারে যদি সংক্রমিত হন মা, তাহলে প্রয়োজন অনুসারে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে বাচ্চার ডেলিভারি করে দেওয়া হয়। আবার কখনও মায়ের প্রি-টার্ম লেবারও হতে পারে। গর্ভযন্ত্রণা হলে সতর্কতার সঙ্গে বাচ্চার ডেলিভারি করাতে হবে। এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকই।

সদ্যোজাতর মা করোনা আক্রান্ত হলে শিশু কি স্তনপান করতে পারবে?
ডা. বিশ্বাস জানালেন, করোনা আক্রান্ত মা শিশুকে স্তনপান করাতে পারেন। তবে উপযুক্ত সুরক্ষা বস্ত্র পরে, মুখ মাস্কে ঢেকে স্তনপান করাতে হবে। মায়ের দুধ থেকে  করোনা সংক্রমণ ঘটেছে, এমন কোনও ঘটনার কথা এখনও শোনা যায়নি।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে জানায়,  মায়ের বুকের দুধে  করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভাইরাসে আক্রান্ত মায়েদের তাই শিশুকে বুকের দুধ পান করানো বন্ধ না করার পরামর্শ দিয়েছে WHO। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে স্তনপান খুবই জরুরি।
'তবে অনেকসময় করোনা আক্রান্ত মা নিজেই সন্তানকে ওই সময় স্তনপান করাতে ভয় পান। সেক্ষেত্রে বাইরের দুধ দেওয়া যেতে পারে। ', জানালেন চিকিৎসক বিশ্বাস।

গর্ভবতীরা করোনা আবহে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে কী কী করবেন?
-গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের থেকে ঈষৎ কম। তাই একটু বেশি সাবধানতার প্রয়োজন।

-বাইরে না-বেরনোই ভাল। একান্ত বেরোতে হলেও পরুন মাস্ক, গ্লাভস। ব্যাগে থাকুক স্যানিটাইজার।

-বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন।

- গর্ভবতীরা যে কোনও ওষুধপত্তর খেতে পারেন না। তাই বেশি সাবধান হতেই হবে। সামান্য উপসর্গ দেখলেই ডাক্তার দেখাতে হবে।

- অনেক সময় বেশি জ্বর হলে বা করোনা ধরা পড়লে প্রি-টার্ম ডেলিভারিও করা হয়ে থাকে।