কলকাতা: হাতে মাত্র দ্বিতীয় ডোজের ১০টি ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন পেতে শতাধিক মানুষের লাইন ঘিরে বিশৃঙ্খলা পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজ না থাকায় ভোগান্তিতে কয়েকশো মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়ায় আসানসোল ইএসআই হাসপাতালে চলে বিক্ষোভ।
কাঁপুনি ধরিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য একদিনে ভারতে করোনা আক্রান্ত হলেন চার লক্ষেরও বেশি নাগরিক। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ লক্ষ ১২ হাজার ২৬২ জন নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও অবধি বিশ্বের কোনও দেশে একদিনে এতজন আক্রান্ত হননি। সব রেকর্ড তছনছ করে একদিনে ভারতে করোনায় মৃত্যু হল প্রায় চার হাজার জনের।
আর এই আবহে ভ্যাকসিনের আকালের ছবিও প্রকট হয়েছে। বিশ্বের মোট ভ্যাকসিনের ৬০ শতাংশ যখন ভারতে উৎপাদিত হয়, তখন এখানেই কেন ভ্যাকসিনের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে? পূর্বস্থলীতে হাতে গোনা ডোজ। দুর্গাপুরে অমিল দ্বিতীয় ডোজ। আসানসোলে ভ্যাকসিন-বিশৃঙ্খলা।
বৃহস্পতিবার সকালে পূর্বস্থলী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র মজুত ছিল ভ্যাকসিনের মাত্র ১০টি ডোজ। কিন্তু, ভ্যাকসিনের আশায় সূর্য ওঠার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন বহু মানুষ। আর ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হতেই ভ্যাকসিন শেষ। ক্ষোভ আর একরাশ বিরক্তি সঙ্গী প্রবীণদের। ভ্যাকসিন নিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসেছিলাম, সমুদ্রগড় থেকে ভোরে আসি, ৫২ দিন হয়ে গেল তাও ভ্যাকসিন পেলাম না, বলল ১০টা আছে। পূর্বস্থলীর বিএমওএইচ প্রশান্ত সরকার বলেন, আমাদের গাড়ি আজ যাচ্ছে বর্ধমানে, আশা করছি কাল ভ্যাকসিন পেয়ে যাব, আমাদের জানানো হয়েছে সেকেন্ড ডোজ দেওয়া হবে।
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে সপ্তাহ খানেক ধরে নেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ। দ্বিতীয় ডোজেও পড়েছে টান। সব কাজ ফেলে যাঁরা ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের বড় অংশই পাননি দ্বিতীয় ডোজ। অনেকেই আবার টানা কয়েকদিন ধরে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। চাহিদা-জোগানের অঙ্ক না মেলায় এই পরিস্থিতি বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালের সুপার ধীমান মণ্ডল বলেন, ডিমান্ডের থেকে সাপ্লাই কম তাই দিতে পারছি না, যে মুহূর্তে আসছে তখন দেওয়া আসছে, আমরা সেকেন্ড ডোজ অগ্রাধিকার দিচ্ছি, আশা করছি আজ-কালের মধ্যে ভ্যাকসিন আসবে।
আসানসোল ইএসআই হাসপাতালে আবার ভ্যাকসিনেশন ঘিরে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। প্রবীণদের অভিযোগ, কোনও ডোজই নেই হাসপাতালে। সেই তথ্যও তাঁদের জানানোর কথা মনেই করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে পশ্চিম বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, আসানসোল ইএসআই হাসপাতালে প্রথম ডোজ বন্ধ থাকলেও, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে নানা মহলে বারবার একটাই প্রশ্ন উঠছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়বে এটা জেনেও, কেন এর মোকাবিলায় আগে থেকে প্রস্তুত হয়নি সরকার? কেন চারদিকে বেডের আকাল? কেন অক্সিজেনের জন্য হাহাকার? কেনই বা ভ্যাকসিন নিয়ে এই হয়রানি সাধারণ মানুষের?