সুদীপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ: তিনি সমাজ গড়ার কারিগর। এই দুঃসময়, সমাজের এক শ্রেণির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন এক শিক্ষক। বেতনের একটা অংশ দিয়েছেন দুঃস্থদের সাহায্যে। করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার, প্রয়োজনীয় সামগ্রী। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে কিনে দিয়েছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিলি করছেন মাস্ক স্যানিটাইজার। কাউকে মাস্ক ছাড়া দেখলেই সচেতন করছেন।


সঙ্কটকালে অন্যরকম ভরসা জোগাচ্ছে রায়গঞ্জের শিক্ষকের সামাজিক ভাবনা। তিনি মৃণাল সিংহ। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের মহারাজা জগদীশনাথ হাইস্কুলের শিক্ষক।  পেশায় শিক্ষক কিন্তু নেশা আর্তের পাশে দাঁড়ানো। মৃণাল সিংহ বলেন, শিক্ষকরা বসে বসে মাইনে দিচ্ছি। আমি চাই প্রতিটা স্কুলে সেফ হোম হোক। চিকিত্স্ক, নার্সরা কাজ করুক। সেইসঙ্গে আমাদের ইনভলভ করুক।


করোনা আবহে, গত একবছরে, ভয়ঙ্কর ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি। লকডাউনে চাকরি হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। থমকে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এই পরিস্থিতিতে, সেইসব দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন রায়গঞ্জের বীরনগরের বাসিন্দা মৃণাল সিংহ। তিনি বলেন, ২০ শতাংশ মাইনে দিয়ে দেব। যেভাবে সাহায্য করতে হয় করব। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে অনেক রোগীর আত্মীরা বাইরে থাকে। তাঁদের খাবার পৌঁছে দেব।


করোনা আবহে দিকে দিকে আতঙ্কের ছবি। একদিকে বাড়ছে মৃত্যু মিছিল, তেমনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। অক্সিজেন সঙ্কট থেকে হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা না মেলার অভিযোগ। দেশ তো বটেই, এরাজ্যেও এমন একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে কার্যত কল্পতরুর ভূমিকা পালন করছেন মৃণাল সিংহ।


মাস্টারমশাইকে এই যুদ্ধে পাশে পেয়ে খুশি রায়গঞ্জবাসী। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, আমাদের কাছে আর্থিক সাহায্য করবেন বলেছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছেন। আরও দেবেন বলেছেন। সাধারণ মানুষও এভাবেই এগিয়ে আসুক।


২০২০-র শুরুর দিক থেকেই রাজ্যে বন্ধ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনলাইনে চলছে পড়াশোনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পঠনপাঠন বন্ধ। বাড়িতেই সময় কাটছে শিক্ষকদের। সেই সময়টাতেই করোনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন মৃণাল সিংহ। অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন অন্যদের।