নয়া দিল্লি : হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের জন্য গাইডলাইন দিল অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস(AIIMS)। কীভাবে হোম আইসোলেশনের মাধ্যমে দেশের হাসপাতালগুলির চাপ কমানো যায় তা জানালেন বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে বাড়িতে থাকাকালীন কী কী করণীয়, তাও বলা হয়েছে গাইডলাইনে।
অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পালমোনারি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও স্লিপ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ সৌরভ মিত্তলের কথায়, হোম আইসোলেশন কোভিড সংক্রমণ রুখতে কাজে আসবে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে কোভিডকালে হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে।
কারা হোম আইসোলেশনের যোগ্য ?
কেবল মাইল্ড কোভিড রোগীদেরই হোম আইসোলেশনের পরামর্শ দেওয়া হয়। শ্বাসনালীর ওপরের ভাগে সমস্যা বা শ্বাসকষ্টের কোনও অসুবিধা না হলে সেই রোগী হোম আইসোলেশনের যোগ্য। তবে কার সামান্য কোভিড হয়েছে, তা চিকিৎসকই ঠিক করবেন।
হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের পরামর্শ
১ হোম আইসোলেশনে রোগীর ক্ষেত্রে ঘরের সঙ্গে বাথরুম থাকাটা আবশ্যিক। কোনও কারণে তা না থাকলে রোগীর জন্য আলাদা বাথরুম রাখতে হবে।
২ HIV পজিটিভ রোগীদের জন্য সাধারণত হোম আইসোলেশেনে থাকার উপদেশ দেওয়া হয় না। শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকায় তাঁদের বাড়িতে রাখাটা ঝুঁকির। তবে চিকিৎসক বললে অবশ্যই তাঁদের বাড়িতে রাখা যেতে পারে।
৩ প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে কো-মর্বিডিটি বা অন্যান্য রোগ চিন্তার কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শেই কোভিড রোগীকে বাড়িতে রাখার পরামর্শ দেওয়া উচিত। তবে তাঁর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা কোনও নার্সকে থাকতে হবে।
৪ প্রবীণ নাগরিকদের হোম আইসোলেশনে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে নার্সকে। নিয়ম মেনে আপডেট দিতে হবে 'ট্রিটিং ফিজিশিয়ান'কে। কোভিডের চিকিৎসার পাশাপাশি অন্যান্য রোগের ওষুধও খাইয়ে যেতে হবে নার্সকে।
৫ রোগীর শরীরে যেন জলের পরিমাণ না কমে সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি প্রবীণ নাগরিক যাঁদের কোমর্বিটিডি রয়েছে, তাঁদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিপাইরেটিক্স চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখত হবে, এইসব রোগীর ক্ষেত্রে ঘুম একটা বড় ফ্যাক্টর।
৬ নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে পালস অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রায় নজর রাখাটা আবশ্যিক। কোনওভাবে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪ শতাংশের কম হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
৭ পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে রোগীকে। নির্দিষ্ট ঘরের মধ্যেই থাকতে হবে তাঁকে। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক ও কোমর্বিডিটি রয়েছে এরকম পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরে থাকুন।
৮ রোগীকে হোম আইসোলেশনের সময় অবশ্যই আলো-বাতাস খেলে সেরকম ঘরে থাকতে হবে। ওই নির্দিষ্ট ঘরে সব সময় জানালা খোলা রাখতে হবে। যাতে সব সময় আলো-বাতাস আসে।
৯ হোম আইসোলেশনে থাকাকালীন রোগীকে সর্বদা ত্রিস্তরীয় মেডিক্যাল মাস্ক পরে থাকতে হবে। প্রতি ৮ ঘণ্টা অন্তর বা তার আগে ভিজে গেলে এই মাস্ক বদলে ফেলতে হবে রোগীকে। 'কেয়ার গিভার' রোগীর ঘরে প্রবেশের আগে দুজনকেই এন ৯৫ মাস্ক পরতে হবে।
১০ রোগী ঘরের যেই জায়গা স্পর্শ করছে সেগুলি ফিনাইল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল ইত্যাদি। অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজার দিয়ে এই জায়গাগুলি পরিষ্কার করে কোনও লাভ হবে না।
১১ রোগীকে নিজের ঘরে খাবার দিতে হবে। রোগীর বাসন ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
১২ রোগীর ক্ষেত্রে নিয়ম করে দিনে ২ বার গরম জলে গার্গল ও উষ্ণ গরম জলে ভাপ নেওয়াটা বাধ্যতামূলক।
১৩ এই সময়ে ভিটামিন সি ও জিঙ্ক ট্যাবলেট নিতে পারেন রোগী।
১৪ কোনওভাবেই হোম আইসোলেশনে থাকাকালীন রেমডিসিভির নেবেন না। এই ওষুধ নিতে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে কোনও হাসপাতালে নিতে হবে।
১৫ ১০দিন কোনও উপসর্গ দেখা না দিলে হোম আইসোলেশন পর্ব ত্যাগ করতে পারেন রোগী। টানা তিন দিন জ্বর না এলেও এই কাজ করা যাবে। একবার হোম আইসোলেশন পর্ব শেষ হলে করোনা পরীক্ষা করার কোনও প্রয়োজন নেই।