নয়াদিল্লি: অতিমারির প্রকোপ কেটে গিয়েছে। করোনার সময়কার অব্য়বস্থা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভও থিতিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পুরনো সেই ক্ষত আবারও দগদগে হয়ে উঠল নয়া একটি রিপোর্টকে ঘিরে। কারণ করোনাকালের মৃত্যুসংখ্য়া ভারত সরকার হেরফের ঘটিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বিশেষ করে করোনার প্রথম ঢেউয়ে যত জন মারা যান, তার চেয়ে মৃতের সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেখানো হয় বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক স্তরের ওই রিপোর্ট। যদিও কেন্দ্র এই দাবি অস্বীকার করেছে। (COVID Death Toll Report)


Science Advances জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এই দাবি করা হয়েছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত গবেষক, ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের একজন সমাজবিজ্ঞানী, নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির এক অর্থনীতিবিদ মিলে এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন লিঙ্গের এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের উপর করোনার কী প্রভাব পড়েছে, সেই নিয়ে বিশদ রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। আর তাতেই ভারতে করোনায় মৃতদের সংখ্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলা হয়েছে। (INDIA COVID Death Toll)


ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, করোনার প্রথম ঢেউয়ের আঘাতেই, ২০২০ সালে ১১ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষের মৃত্য়ু হয়। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান বলছে ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৭৩৮ জন মারা যান। অর্থাৎ সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় বাস্তবে করোনা কালে আট গুণ বেশি মারা যান বলে উঠে এসেছে ওই গবেষণাপত্রে। 


আরও পড়ুন: Jammu And Kashmir Terrorism: অস্ট্রিয়ায় তৈরি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে কাশ্মীরে? জঙ্গিদের থেকে উদ্ধার Steyr AUG, বাড়ছে উদ্বেগ


২০১৯-'২১ সালে কেন্দ্রের ন্য়াশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে (NFHS)-র উপর নির্ভর করেই রিপোর্টটি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। ভারত সরকারের পরিসংখ্যানই নয় শুধু, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ভারতে মৃতের যে সংখ্যা তুলে ধরে, তার চেয়েও দেড় গুণ বেশি মানুষ মারা যান বলে উঠে আসছে। অতিমারির ভুক্তভোগীদের মধ্যেও অসামানতার ছবি ধরা পড়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। 


রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ভারতে উচ্চশ্রেণির হিন্দুদের আয়ুকাল একধাক্কায় ১.৩ বছর কমে যায়। সেই তুলনায় তফসিলি জাতি এবং শ্রেণিবৈষম্যের শিকার মানুষজনের আয়ুকাল একধাক্কায় কমে যায় ২.৭ বছর। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় ভারতীয় মুসলিমদের। ২০২০ সালে ভারতীয় মুসলিমদের আয়ু একধাক্কায় ৫.৪ বছর কমে যায়। ভারতীয় পুরুষদের আয়ু যেখানে ২.১ বছর কমে যায়, মহিলাদের আয়ু কমে যায় ৩.১ বছর। পৃথিবীর ঠিক অন্যত্র উল্টো ছবি ধরা পড়ে, মেয়েদের চেয়ে পুরুষদের আয়ু কমে যায় অনেকটাই। 


করোনা কালে মৃতদের পরিসংখ্যান নিয়ে আগেও বিতর্ক বেধেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, করোনায় ভারতে ৪ লক্ষ ৮১ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। WHO-র দাবি ভারতে অতিমারিতে ৩৩ থেকে ৬৫ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন। WHO-র দাবি আগেই খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্র। দিল্লির যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা যে পদ্ধতিতে হিসেব করে, ভারতের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা সঠিক নয়। কিন্তু টরন্টোর সেন্টার ফর গ্লোবাল হেল্থ রিসার্চের ডিরেক্টর প্রভাত ঝা-র মতে ডেলটা প্রজাতি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল। তিনি বলেন, "আমাদের হিসেব অনুযায়ী, আরও ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ বেশি মানুষ মারা যান করোনা কালে, যার মধ্যে ডেলটা প্রজাতির কোপেই ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যান।" নয়া রিপোর্ট সেই হিসেবও ছাপিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। 


কিন্তু কেন্দ্রের তরফে নয়া এই রিপোর্ট খারিজ করা দেওয়া হয়েছে। শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, 'এই রিপোর্ট সমর্থন বা গ্রহণযোগ্য নয়। হিসেবের পদ্ধতিতে ত্রুটি রয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের NFHS সমীক্ষা যোগ করা হয়েছে রিপোর্টে, অথচ ২০২০ এবং ২০১৯ সালের মৃত্যুহারের সমীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি'। রিপোর্টে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে কেন্দ্র। সেই নিয়ে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। 


রিপোর্টে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ পালেরও। তাঁর মতে, সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (CRS) দেশের ৯৯ শতাংশ মৃত্যু নথিভুক্ত করে। সেই অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার বাড়তি মৃত্যু হয়। তাই বাড়তি ১১ লক্ষ ৯০ হাজারের সংখ্যাটি গ্রহণযোগ্য নয়।