নয়াদিল্লি: পর পর জঙ্গি হামলা, হতাহত বৃদ্ধিতে ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ। জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। সেই আবহেই জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হল অত্যাধুনিক বিদেশি অস্ত্রশস্ত্র, যা সেনাবাহিনীর মাথাব্যথা বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ যে সে অস্ত্র নয়, জম্মু ও কাশ্মীরের কেরান সেক্টরে নিহত দুই জঙ্গির কাছ থেকে অস্ট্রিয়ায় তৈরি অত্যাধুিক Steyr AUG অ্যাসল্ট রাইফেল উদ্ধার হয়েছে। কোথা থেকে ওই সব অস্ত্রশস্ত্র ঢুকল উপত্যকায়, উঠছে প্রশ্ন। (Jammu And Kashmir Terrorism)
গত ১৭ জুলাই কেরান সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ রুখে দেয় সেনা। জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময় চলে, তাতে দুই জঙ্গি মারা যায়। তাদের কাছ থেকেই অস্ট্রিয়ায় তৈরি Steyr AUG অ্যাসল্ট রাইফেল উদ্ধার হয়েছে। ১৯৭৭ সালে অস্ট্রিয়ার সেনার হাতে ওই রাইফেল ওঠে। এই রাইফেল এতটাই অত্যাধুনিক যে, একমাত্র ইজরায়েলের তৈরি Tavor অ্যাসল্ট রাইফেলই তার সমকক্ষ। সাধারণ নকশা হলেও একেবারে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে ওই রাইফেল। টেকেও দীর্ঘদিন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দুরন্ত কাজ করে, রক্ষণাবেক্ষণের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। আমেরিকার M4 Carbine রাইফেলের চেয়েও অব্যর্থ এর নিশানা। (Steyr AUG Assault Rifle)
১৯৮৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম বার উপত্যকায় জঙ্গিদের কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল। সেই সময় শ্রীনগরের রাজবাগ বসতি এলাকায় তদানীন্তন DIG আলি মহম্মদ ওয়াতলির বাড়িতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। DIG-র দেহরক্ষীর পাল্টা গুলিতে এজাজ আজহার নামের এক জঙ্গি মারাও যায়। তার কাছ থেকে মেলে অ্যাসল্ট রাইফেল। ওই আগ্নেয়াস্ত্র সেই সময় উপত্যকার পুলিশের হাতেও ওই আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। ওই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করত না সেনাও। পরবর্তীতে ওই অ্যাসল্ট রাইফেলটিকে কালাশনিকভ বলে চিহ্নিত করা হয়।
অ্যাসল্ট রাইফেল AK গোত্রে পড়ে কালাশনিকভ। মিখাইল কালাশনিকভের তৈরি নকশার উপর তৈরি AK রাইফেল। উপত্যকায় উদ্ধার হওয়া ওই রাইফেলটিকে AK-47 হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সেই সময়, যার নাম Avtomat Kalashnikova. সেটি কালাশনিকভ গোত্রের রাইফেলই। ১৯৪৭ সালে প্রথম তৈরি করা হয় Automat Kalashnikova নামে। ১৯৪৯ সালে সেটি রুশ সেনার রাইফেলে পরিণত হয়। রাশিয়ার অস্ত্র ব্যবসায়ী মিখাইল কালাশনিকভ সেটির নির্মাতা।
সেই সময় ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক জানান,"জঙ্গিদের হাতে AK অ্যাসল্ট রাইফেল ওঠার অর্থ তাঁরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। পাকিস্তানি সেনা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছ। আফগানিস্তানে রাশিয়ার উপস্থিতি এবং আফগান জঙ্গিদের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন, এই দুইয়ের জেরেই পাকিস্তানের হাতে AK অ্যাসল্ট রাইফেল এসে পৌঁছয়। সেখান থেকেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপত্যকায় জঙ্গিরা প্রবেশ করে বলে জানান তিনি।
নয়ের দশকে উপত্যকায় পড়শি দেশ থেকে জঙ্গিরা দলে দলে প্রবেশ করতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অত্য়াধুনিক বিদেশি অস্ত্রশস্ত্রও ঢোকে প্রচুর পরিমাণে। এর মোকাবিলা করতে উপত্যকায় পুলিশ এবং সেনাকে ঢেলে সাজায় সরকার। প্রশিক্ষণের ধরনও পাল্টানো হয়। জওয়ানদের শারীরিক শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় উপত্যকার পুলিশকেও। BSF, CRPF-এর মতো আধা সামরিক বাহিনীপরও ক্ষমতাবৃদ্ধি করা হয়।
কয়েক বছর আগে, ২০২২ সালের ১১ জুলাই পুলওয়ামার অবন্তীপুরা থেকে M4 Carbine রাইফেল উদ্ধার হয়, যাতে কার্যতই চমকে যান সকলে। কারণ সেই সময় M4 Carbine রাইফেল ব্যবহার করত আমেরিকার সেনা। ওই রাইফেল থেকে ছোড়া গুলি সাধারণ বর্ম ভেদ করে শরীরে ঢুকে যেতে পারে। এর পর সেনার জন্য় অত্যাধুনিক বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট তৈরি নিয়ে আলোচনা শুকু হয়। কারণ বর্মগুলি ওই রাইফেল থেকে ছোড়া গুলি আটকানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না।
পরে গোয়েন্দাদের রিপোর্টে জানা যায়, আমেরিকার সেনার ব্যবহৃত M4 Carbine রাইফেল আফগানিস্তানেও মজুত ছিল। আমেরিকা এবং NATO বাহিনী যখন কাবুল ছেড়ে বেরিয়ে যায়, সেই সময় প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রও ফেলে রেখে যায় তারা, যা পরবর্তীতে তালিবান এবং সশস্ত্র সংগঠনগুলির হাতে ওঠে পাকিস্তান হয়ে সেগুলি এসে ঢোকে উপত্যকায়। এবার অস্ট্রিয়ায় তৈরি Steyr AUG অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। যদিও সেনাবাহিনীর একাংশের মতে, যত অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রই হাতে পাক জঙ্গিরা, প্রশিক্ষিত ভারতীয় সেনাদের সামনে গুটিকয়েক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টিকতে পারবে না তারা।