নয়াদিল্লি: একটানা ভারী বৃষ্টিতে বানভাসি গুজরাত। সেই আবহেই ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা এল। গুজরাতের সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় মৌসম ভবন। তারা জানিয়েছে, এই মুহূর্তে আরব সাগরে দানা বাঁধছে ঘূর্ণিঝড় 'আসনা'। ১৯৭৬ সালের পর, গত ৪৮ বছরে এই প্রথম আরব সাগরে কোনও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে।  সপ্তাহান্তে গুজরাতে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়তে চলেছে বলে জানানো হয়েছে। (Cyclone Asna)


ঘূর্ণিঝড় 'আসনা'র নামকরণ করেছে পাকিস্তান, যার অর্থ প্রশংসা বা স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। আবার আসনা বলতে উজ্জ্বল উপস্থিতিও বোঝানো হয়। আরব সাগরে তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়টিকে ঘিরে উদ্বিগ্ন আবহবিদরা। কারণ এতদিন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যে বোঝাপড়া ছিল তাঁদের, তা ভেঙে দিচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়। ১৯৭৬ সালে যে ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশা হয়ে পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোয়, সেটি আরব সাগরে, ওমান উপকূলের কাছে শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। এবারের ঘূর্ণিঝড়টির সময়কালও ভাবাচ্ছে আবহবিদদের। (Arabian Sea Cyclone)


বর্ষার সময় সাধারণত আরব সাগরের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে থাকে। ফলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম। নিম্নচাপের ক্ষেত্রে হাওয়ার গতিবেগ যেখানে ঘণ্টায় ৫২ থেকে ৬১ কিসোমিটার পর্যন্ত থাকে, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ ৬৩ থেকে ৮৭ কিলোমিটার হয়। পশ্চিম আরব সাগর সেই নিরিকে ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকুল নয়। বরং বঙ্গোপসাগরেই বার বার ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়।



রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, ভারত মহাসাগরের উত্তরের অংশ, যার মধ্যে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগর পড়ে, সেখানে বছরে পাঁচটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। আরব সাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা প্রায় চার গুণ বেশি।  মূলত মে থেকে নভেম্বরের মধ্যেই বেশি ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। তাই এই সময় আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। 


কেন্দ্রীয় সরকারের ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব মাধবন রাজীবনও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গবিশ্ব উষ্ণায়নের জেরেই এমন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে বলে মত তাঁর। তাঁর মতে, উপমহাদেশের আবহাওয়া নিয়ে যে বোঝাপড় রয়েছে, তা এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জের মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন এর নেপথ্য কারণ বলেও জানিয়েছেন তিনি। আরব সাগরের পরিবর্তনশীল সাইক্লোনোজেনেসিস নিয়ে নতুন করে গবেষার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত তাঁর।