পাঁশকুড়া: ইয়াস-বিপর্যয়ের পাশাপাশি ভরা কটালের জলোচ্ছ্বাসের জের। প্রভাব পড়েছে পাঁশকুড়া ও মহিষাদলে সবজি চাষে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই সব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে সবজি চাষ হয়। চাষ-আবাদের ওপর নির্ভরশীল এখানকার কয়েক হাজার মানুষ। ইয়াসের পাশাপাশি ভরা কটালের জেরে চাষের জমি জলমগ্ন। বড়সড় আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা সবজি চাষিদের। আপাতত সরকারি সাহায্যই ভরসা। প্রশাসনের তরফে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
ইয়াসের ঝাপটায় পূর্ব মেদিনীপুরের মাছ চাষেরও ক্ষতি হয়েছে। বিঘের পর ভেসে গেছে মাছের ভেড়ি। চিংড়ি ওঠার মুখে দুর্যোগের ধাক্কায় কার্যত পথে বসেছেন কয়েকশো ব্যবসায়ী। প্রশাসনের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন মাছচাষিরা।মাছ চাষ করেই ভাতের জোগাড় করেন হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, কোলাঘাট, মহিষাদলের কয়েকশো মানুষ। ইয়াস আসের আগে ভেড়ির চারপাশ জাল দিয়ে ঘেরাও হয়েছিল। কিন্তু কটালের জল আর ঝড়ের ধাক্কায় সব লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। নদীর জল ভাসিয়ে দিয়েছে একের পর এক ফিশারি।
বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী মোটা টাকা ধার নিয়ে ভেড়িতে চিংড়ি, কাতলা ছেড়েছিলেন। মাছ ওঠার মুখে প্রকৃতির তাণ্ডবে তাঁদের মাথায় যেন বাজ পড়েছে। মাছ ভেসে গিয়েছে।
শুধু উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের মতো উপকূলবর্তী এলাকাগুলিই নয়, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আরও কয়েকটি জেলায়। তালিকায় রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলাও। ইয়াসের প্রভাবে ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত রাজ্যের শস্যগোলাও। মাঠেই শুয়ে পড়েছে মাঠের ফসল। ২৬ মে ইয়াস আছড়ে পড়ার দিন ও তার পরের দিন ব্যাপক বৃষ্টি হয় পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায়। বর্ধমান, মেমারি ,জামালপুর, ভাতার, কালনা,কাটোয়া সহ বহু জায়গায় ভারী বৃষ্টির জেরে সবজি চাষে ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে তিল আর আখ চাষে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, পূর্ব বর্ধমানে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ১৩ হাজার হেক্টর জমির তিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছিল, তার মধ্যে ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ৩৭৩ হেক্টর জমিতে আখ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর।এই পরিস্থিতিতে বাকি ফসল বাঁচাতে কী করণীয়, তা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি আধিকারিকরা। পূর্ব বর্ধমানের কৃষকদের আক্ষেপ, জেলায় ঝড়ের ঝাপটা সরাসরি না এলেও, রুটিরুজির প্রশ্নে বড় ধাক্কা খেয়ে গেলেন তাঁরা।