গ্যাংটক: বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪, সন্ধে পেরোতেই সিকিমের বিপর্যয়ে (Sikkim Flash Flood) প্রাণহানির (Death Toll) সংখ্যা পৌঁছে গেল ১৮-য়। কাদার তাল এবং কোমর সমান জল ঠেলে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেনা (Indian Army) ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF)। যদি কোনও মিরাকল ঘটে, কাউকে বাঁচানো যায়, কারও হদিস মেলে... সরকারি হিসেব মতো, এখনও পর্যন্ত ৯৮ জন নিখোঁজ। এঁদের মধ্যে ২২ জন সেনা আধিকারিক। প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া সড়ক, বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প-সহ ধ্বংসের চিহ্ন দিকে দিকে। 


কী পরিস্থিতি?     
বুধবার ভোরের দিকে সিকিমের লোনাক হ্রদের মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে যে হড়পা বান এসেছিল, তার জেরে ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে হিসেব এখনই করা অসম্ভব। আপাতত শক্তিমন্ত্রক জানিয়েছে, বন্যার জলস্তর কিছুটা নামলে সিকিমের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষতির পরিমাণ বিশদে খতিয়ে দেখবে। তবে  সিকিমের অন্যতম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র NHPC-র তরফে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে, যত দ্রুত তার কাজকর্ম ফের শুরু করা যায়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধের দিকে জানা যায়, অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্তত ২৬ জন জখম। সিকিমের বিভিন্ন হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে বলে খবর। এখনও পর্যন্ত যা শোনা যাচ্ছে, তাতে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। যদিও এঁদের মধ্যে মেরেকেটে ২ হাজারের মতোকে উদ্ধার করা গিয়েছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এসবের মধ্য়ে আশার ক্ষীণ আলো দেখিয়েছে একটি খবর। সিকিমের মুখ্যসচিব ভি বি পাঠকের দাবি, সেনার ২৭তম মাউন্টেন ডিভিশনের আধিকারিকরা তাঁকে জানিয়েছেন যে লাচেন, লাচুং এবং উত্তর সিকিমের বাকি লাগোয়া এলাকাগুলিতে যে পর্যটকরা আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকে নিরাপদ রয়েছেন। 
হিসেব বলছে, বিদেশি-সহ সিকিমে এই মুহূর্তে অন্তত হাজার তিনেক পর্যটক আটকে রয়েছেন। তাঁদের দিকে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে ওই পর্যটকদের পরিবারের উদ্বিগ্ন সদস্যদের কথা বলিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়। পর্যটকদের উদ্ধারে কড়া নজর রয়েছে সিকিম প্রশাসনের। আপাতত যা স্থির হয়েছে, তাতে মঙ্গন পর্যন্ত তাতে আকাশপথে উড়িয়ে আনা হবে। বাকিটা সড়কপথে আনার ব্যবস্থা করা হবে। সিকিমের মুখ্যসচিব আরও জানান, আবহাওয়া আর না বিগরোলে আগামীকাল থেকেই লাচেন এবং লাচুংয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারকাজ শুরু করা হবে। সেনা এবং ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার সেই জন্য তৈরি রয়েছে, বলেও জানান তিনি। 
       


আর যা...
উদ্ধারের পাশাপাশি ত্রাণের কাজও চলছে। হড়পা বানে সিকিমের অন্তত ১১টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার মধ্যে ৮টি স্রেফ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায়। ঘরবাড়ি, নিকাশিনালা, রাস্তাঘাট...চারদিকে শুধু জল আর জল। এই অবস্থায় স্থানীয়দের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এদিন লাচেন পর্যন্ত চাল, লবণ, দুধের মতো জিনিস পৌঁছে দেয় বেশ কয়েকটি চপার। পাশাপাশি, জরুরি পণ্যের কারবারিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে প্রশাসন। কোনও ভাবে যাতে জরুরি পণ্যের অভাব না ঘটে, সে দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, সিকিম সরকারের আর্জি, পর্যটকরা যেন তাঁদের বেড়ানোর পরিকল্পনা কিছুদিনের জন্য পিছিয়ে দেন। জীবন যত দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক ছন্দে না ফিরছে, তত দিন অন্তত সিকিমে আসার কথা তাঁরা যেন না ভাবেন, এমনই অনুরোধ করা হয়েছে সরকারের তরফে।  কিন্তু ক্ষতির এই পাহাড় পেরিয়ে আবার কবে জীবনের সুর খেলে বেড়াবে স্বর্গসুন্দর সিকিমে? আপাতত উত্তর নেই। এখন শুধু লড়াই চলছে। 


আরও পড়ুন:কালও কি ভারী বৃষ্টি? কবে থেকে কমবে, জানিয়ে দিল আবহাওয়া দফতর