কলকাতা: করোনাভাইরাসের অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে দাবি করে বেশ কয়েকটি রাজ্য খেতে বলেছে আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ নামে একটি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকও করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর ও ফলপ্রসূ ওষুধের তালিকায় রেখেছে এই ওষুধের নাম। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে তুমুল বিতর্ক চলছে। মূল কারণ হল, এই ওষুধ যে করোনা সারাতে সক্ষম তার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও মেলেনি।


রাজস্থান, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ ও কেরল সরকার করোনা প্রতিষেধক হিসেবেই কিন্তু খেতে বলেছে এই আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০। মহারাষ্ট্র সরকার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও মুম্বই পুরনিগম কিন্তু অন্তত দুটি ওয়ার্ডে এই ওষুধ বিলি করেছে, ওই ওয়ার্ডদুটির বাসিন্দাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। হরিয়ানা জেল বিভাগ এবং মুম্বই পুলিশ ওষুধটি বিলি করেছে বন্দি ও পুলিশ অফিসারদের মধ্যে। এমনকী যে সব রাজ্যে এই ওষুধ খাওয়ার কথা বলা হয়নি, সে সব রাজ্যের বাসিন্দারাও অনেকে হোমিওপ্যাথিক ক্লিনিক থেকে এই ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। স্থানীয় ওষুধের দোকানগুলিতেও আর্সেনিকাম অ্যালবাম পাওয়া যাচ্ছে।

দেখা যাক, কী দিয়ে তৈরি হয় এই ওষুধ। ডিসটিলড ওয়াটারের সঙ্গে আর্সেনিক গরম করতে হয় তিনদিন ধরে, বারবার। কিন্তু আর্সেনিক যুক্ত জল পান করলে শরীর যে অত্যন্ত খারাপ হতে পারে, তা তো সকলের জানা। দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকের সংস্পর্শে এলে ত্বকে ক্যানসার হতে পারে, হতে পারে হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত নানা সমস্যা। এই ওষুধে আর্সেনিকের পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম, জানিয়েছেন মুম্বইয়ের প্রেডিকটিভ হোমিওপ্যাথি ক্লিনিকের চিকিৎসক অমৃশ বিজয়কর।

তিনি বলেছেন, শরীরে প্রদাহ বা জ্বালা হলে এই ওষুধ কার্যকরী। ডায়রিয়া, সর্দি, কাসিতেও তা ব্যবহার করা হয়। উদ্বেগ, অস্থিরতা বা আলসারের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহত হয়। ছোট এক বোতল আর্সেনিকাম অ্যালবামের দাম ২০-৩০ টাকা।

২৮ জানুয়ারি সায়েন্টিফিক অ্যাডবাইসরি বোর্ড অফ দ্য সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি বা সিসিআরএইচ বলে, করোনা সংক্রমণ রুখতে এই ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা একটি ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করে, বলে, এই ওষুধ জ্বর সারাতে কার্যকর। পরদিন আয়ুষ মন্ত্রকও এই ওষুধটি সেবনে প্রস্তাব দেয়। বলে, তিনদিন কালি পেটে এটি খেতে হবে। যদি এলাকায় করোনা সংক্রমণ শুরু হয়, তবে একমাস পর ফের একই ডোজ এভাবেই খেতে হবে। মন্ত্রক প্রস্তাব করার পর বেশ কয়েকটি রাজ্য তাদের বাসিন্দাদের এই ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়। সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনও গত মাসে একটি নির্দেশিকা বার করে বেসরকারি চিকিৎসকদের আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথির মত অল্টারনেটিভ মেডিসিন দিয়ে করোনা চিকিৎসার পরামর্শ দেয়।

যদিও আইসিএমআর জানিয়েছে, তারা এই ওষুধ ব্যবহারের কোনও পরামর্শ দেয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও করোনা চিকিৎসায় আর্সেনিকাম প্রয়োগের কথা বলেনি। তাদের প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন বলেছেন, এই ওষুধ যে করোনা রুখতে কার্যকর তার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তাই সকলকে এটা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যায় না।

একইভাবে উদ্বিগ্ন হোমিওপ্যাথরাও। তাঁরা বলেছেন, আয়ুষ মন্ত্রককে তাঁরা চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, কোনওরকম ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই কেন এই ওষুধ করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর বলে দাবি করা হল। শ্বাসকষ্ট ও ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ হিসেবে আর্সেনিকামের নাম করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর বলে দাবি করেছে আযুষ মন্ত্রক। কিন্তু হোমিওপ্যাথদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট কোনও ওষুধে সাড়া দেওয়া ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন। তাই আর্সেনিকাম খেলেই যে করোনা সারবে এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। এটা চিকিৎসার অংশ হতে পারে, তার বেশি কিছু নয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।