নয়াদিল্লি: আজ সকাল পর্যন্ত জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল আম আদমি পার্টি। তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে অরবিন্দ কেজরিওয়াল হ্যাট্রিক গড়তে চলেছেন বলে দাবি করছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। কিন্তু শনিবার দিল্লিতে ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই ছবিটা স্পষ্ট হতে শুরু করে। বেলা ১০.৩০টা পর্যন্ত ভোটগণনা যতদূর এগিয়েছে, তাতে বিজেপি-ই রাজধানীতে সরকার গড়ার পথে এগিয়ে রয়েছে। শেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেলা ১০টা বেজে ৩৫ মিনিটে AAP ২৮টি আসনে এগিয়ে, BJP এগিয়ে ৪২টি আসনে। কংগ্রেস শূন্য। অর্থাৎ ৭০ আসনের বিধানসভায় সরকার গড়তে প্রয়োজনীয় ম্যাজিক সংখ্যা পার করে গিয়েছে BJP। আম আদমি পার্টির ভোটে প্রায় ১০ শতাংশ ধস দেখা যাচ্ছে। BJP গতবার যেখানে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, এবার প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট ঢুকেছে তাদের ঝুলিতে। দিল্লিতে বিজেপি-র সদর দফতরে এবং কার্যালয়ে ইতিমধ্যেই উদযাপন শুরু হয়ে গিয়েছে। (Delhi Assembly Election Results)
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে এবার গোড়া থেকেই নজর ছিল সকলে। কেজরিওয়াল তৃতীয় বারের জন্য জয়ী হয়ে হ্যাট্রিক গড়েন কি না, এই প্রশ্ন সবচেয়ে বড় হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু গোড়া থেকেই তাল কাটতে শুরু করেছিল। আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়ালের জেলযাত্রার পর থেকেই দিল্লিবাসীর মনের পরিবর্তন ঘটে যায় বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর। ভোটবাক্সেও তার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন তিনি। এর ফলে, ১৯৯৮ সালে সুষমা স্বরাজের পর দিল্লিতে বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী মসনদে আসীন হতে চলেছেন। (BJP in Delhi)
কিন্তু কোন অঙ্কে ২৭ বছর পর দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বিজেপি? এর জন্য গেরুয়া শিবিরের কৌশলকে কৃতিত্ব দিয়েছেন বিশ্বনাথ। তাঁর মতে, এবারে দিল্লিতে গোড়া থেকেই অন্য কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। হিন্দুত্বের রাজনীতির দিকে এগোয়ইনি। বরং আগাগোড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে এসেছে। কেজরিওয়ালের আমলে শাসনব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মনে যে ক্ষোভ জমছে, তা গোড়াতেই আঁচ করতে পেরেছিল বিজেপি। আর তাতেই দিল্লিবাসীর মনজয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সমাজ কল্যাণমূলক প্রকল্পের কথা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে উদ্যত হয়।
মহিলা ভোটও এবার দিল্লিতে বিজেপি-কে বাড়তি সুবিধা করে দিয়েছে। বাংলার ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের আদলে দিল্লিতে ‘মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা’ প্রকল্পের সূচনা করে বিজেপি। মাসে মাসে মহিলাদের ২৫০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পাশাপাশি, গর্ভবতী মহিলাদের ২১ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করে। বিধবাদের পেনশনও বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে সংসদের বাজেট অধিবেশনে কেন্দ্র যে বাজেটে আয়ক ছাড়ের ঘোষণা করে, তার ফলও ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সর্বশেষ, 'মোদি ফ্যাক্টর'কে কৃতিত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নয়, দিল্লিতে এবার বিজেপি-কে মানুষ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখ চেয়েই। প্রচারে গিয়ে বার বার দিল্লি থেকে 'আপদা' (আপদ) বিদায় করার বার্তা দেন মোদি। তাঁর নেতৃত্বে ডাবল ইঞ্জিন সরকারই রাজধানীর ভোল পাল্টে দিতে পারে বলে দাবি করেন। সেই বার্তা মানুষের মনজয় করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জাতীয় স্তরে এক শিবিরে শামিল কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি যেভাবে বিধানসভা নির্বাচনে খেয়োখেয়িতে নেমে আসে, তাতে বিজেপি-র উপরই মানুষের ভরসা বাড়ে বলেও মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।