নয়াদিল্লি: মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের অপসারণ চেয়ে দায়ের জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিল দিল্লি হাইকোর্ট। মামলার 'মেরিট' নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চ। তবে বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এটি আদালতের এক্তিয়ারের বাইরে পড়ে। বিচারপতি মনমীত পিএস অরোরা বলেন, 'সরকারেরই অন্য বিভাগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা।' ফলে আপাতত, সাময়িক স্বস্তি কেজরিওয়ালের। 


সওয়াল-জবাব...
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাজ করতে আইনি বাধা কোথায়, এদিন তা মামলাকারীর কাছে জানতে চেয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। 'কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হতে পারে, সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু আইনি বাধা কোথায়?' গত ২১ মার্চ দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আজ পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট সেই মামলার শুনানি চলছে।পাশাপাশি, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরাতে চেয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল দিল্লি হাইকোর্টে। সেই মামলাই খারিজ করল হাইকোর্ট। 


আইন যা বলছে...
কেজরিওয়াল মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য় অতিশী মারলেনা জানিয়ে দিয়েছিলেন, গ্রেফতারির পরও মুখ্যমন্ত্রী পদে কোনও রদবদল হবে না। প্রয়োজনে জেল থেকে সরকার চালাবেন তিনি, এটাও বলা হয়। কিন্তু এই ঘোষণার পর থেকে জোর আলোচনা শুরু হয় আইনজীবীদের মধ্যে। প্রথম প্রশ্ন ছিল, গ্রেফতারির পর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা আইনি ভাবে সঙ্গত কিনা? দ্বিতীয় প্রশ্ন ওঠে, আইনি বাধা না থাকলেও বাস্তবে সেটা কতদূর সম্ভব? এদিন, বর্ষীয়ান আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ জানিয়েছিলেন, গ্রেফতারির পর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকতে আইনি বাধা নেই। তাঁর কথায়, 'জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে, কোনও বিধায়ক অপরাধী প্রমাণিত হলে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ বলে গ্রাহ্য হয়। সেক্ষেত্রে তাঁর মন্ত্রিত্বও থাকে না। এর আগে এমন কখনও না ঘটলেও আইনের দিক থেকে তিনি জেলে থেকে কাজ করতেই পারেন।' যদিও অন্য এক অভিজ্ঞ আইনজীবী বিকাশ সিংয়ের আবার জানান, এক্ষেত্রে আইনে বাধা না থাকলেও প্রশাসনিক ভাবে এই কাজ করা অসম্ভব। কারণ হিসেবে উঠে আসে, জেল ম্যানুয়েলের কিছু নিয়ম। এতে বলা হয়, জেলে প্রত্যেক বন্দি প্রত্যেক সপ্তাহে দু'বার করে বন্ধু, আত্মীয়-পরিজন ও সহযোগীদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কী ভাবে কাজ করবেন তিনি?


জনপ্রতিনিধিত্ব আইন...
ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮ নম্বর ধারার ৩ নম্বর উপধারায় কোনও জনপ্রতিনিধির বিধায়ক বা সাংসদ পদ খারিজের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনও জনপ্রতিনিধি যদি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ২ বছর বা তাঁর বেশি কারাদন্ড পেয়ে থাকেন, তা হলে অপরাধী প্রমাণ হওয়ার দিন থেকে তাঁর জনপ্রতিনিধিত্ব  বাতিল বলে গণ্য করা হবে। শুধু তাই নয়। মুক্তির পর ছ'বছর পর্যন্ত এই পদ বাতিলের বিষয়টি বলবৎ থাকবে। তবে কেজরিওয়ালের ক্ষেত্রে এখনও অপরাধ প্রমাণ হয়নি। তাই আইনি দিক থেকে মুখ্যমন্ত্রী থাকতে তাঁর বাধা নেই, মনে করছেন আইনজ্ঞরা। এদিন মামলা খারিজের পর সেই বিষয়টিই প্রতিষ্ঠা পেল বলে মনে করছেন আইনজ্ঞদের অনেকে।


আরও পড়ুন:তিন দশকে ২৩৮ বার পরাজিত, আবারও ভোটে দাঁড়াচ্ছেন দেশের সবচেয়ে ‘হেরো’ প্রার্থী পদ্মরাজন