কলকাতা: দিল্লি হাইকোর্টেও স্বস্তি পেলেন না তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর সরকারি বাংলো খালি করে দিতে বলা হয়েছিল তাঁকে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে গিয়েছিলেন মহুয়া। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিল না আদালত। খারিজ করে দেওয়া হল মহুয়ার আবেদন। মহুয়াকে ডিরেক্টরেট অফ এস্টেটসের কাছে আবেদন করার পরামর্শও দিল আদালত।
টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে মহুয়ার সাংসদপদ খারিজ হয়। তার পর ৭ জানুয়ারির মধ্যে মহুয়াকে 9B টেলিগ্রাফ লেনের সরকারি বাংলো ছাড়ার নির্দেশ দেয় ডিরেক্টরেট অফ এস্টেটস। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মহুয়া। জানান, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে বাংলো খালি করা সম্ভব নয়। নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন জানান।
মহুয়ার আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন একই মর্মে। জানান, সামনেই লোকসভা নির্বাচন। প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন মহুয়া। তাঁর পক্ষে এখন নতুন বাড়ি খোঁজা অসম্ভব। তাই নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সরকারি বাংলোয় থাকতে দেওয়া হোক। এর পাল্টা সরকার পক্ষের আইনজীবী মহুয়ার আবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট সাংসদ পদ খারিজের উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। তাহলে কোন যুক্তিতে সরকারি বাংলোয় থাকতে চাইছেন মহুয়া?" এর পরই আদালত জানিয়ে দেয়, বাংলো ছাড়ার নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেবে না তারা। মহুয়া চাইলে সরাসরি ডিরেক্টরেট অফ এস্টেটসের কাছে আবেদন জানাতে পারেন। সরকারকেও আইন মেনেই বাংলো খালি করতে হবে বলেও মন্তব্য করে আদালত।
কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগর বিভাগের অধীনে পড়ে ডিরেক্টরেট অফ এস্টেটস। নেতা-মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ সরকারি বাসভবন-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের স্থাবর সম্পত্তির হিসেব রাখে তারা। মহুয়ার মামলায় এদিন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যম জানান, বাংলো খালি করার নির্দেশ দেওয়া হলেও, তার জন্য সময় বরাদ্দ করাই দস্তুর। তাই মহুয়ার ক্ষেত্রেও আইনি পথেই এগনো উচিত।
সংসদ থেকে বহিষ্কারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছেন মহুয়া। বুধবার সেখানে শুনানি ছিল। বিষয়টি নিয়ে লোকসভার জেনারেল সেক্রেটারির কাছে জবাব চেয়েছে শীর্ষ আদালত। কিন্তু নির্দেশে অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ দিয়ে তাঁকে সংসদের কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন চেয়ে যে আবেদন জানিয়েছিলেন মহুয়া, তাতে সায় মেলেনি। তার পরই দিল্লি হাইকোর্টে বাংলো খালির নির্দেশ নিয়ে শুনানি ছিল এদিন।
সংসদে জ্বালাময়ী ভাষণের জন্য বরাবর পরিচিত ছিলেন মহুয়া। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে আদানিদের হাতে একাধিক বন্দর তুলে দেওয়া থেকে গৌতম আদানির সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সম্পর্ক নিয়ে লাগাতার সুর চড়াতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও এ নিয়ে ফের সরব হবেন বলে জানিয়েছিলেন, তার আগেই মহুয়ার বিরুদ্ধে নীতি কমিটিতে অভিযোগ জানান বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে টাকা এবং দামি উপহারের বিনিময়ে মহুয়া সংসদে আদানিদের বিরুদ্ধে সরব হন বলে অভিযোগ করেন। এমনকি সংসদে প্রশ্ন জমা দেওয়ার ওয়েবসাইটের আইডি-পাসওয়র্ডও অন্যকে দেন বলে অভিযোগ করেন নিশিকান্ত।
টাকা নেওয়ার কথা আগাগোড়া অস্বীকার করে এসেছেন মহুয়া। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় নীতি কমিটির সদস্যরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অশালীন প্রশ্ন করেন বলেও অভিযোগ করেন। মহুয়াকে যেভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা নিয়ে একজোটে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরাও। তদন্তে যখন কিছু প্রমাণই হয়নি, সেখানে মহুয়ার সাংসদপদ বাতিল হল কোন যুক্তিতে, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।